পার্থর বাবার সঙ্গে কথাবার্তা ছিল, দাবি কাকার

পার্থ দে-র কাকা অরুণ দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে দে পরিবার সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। অরুণবাবু এত দিন যে দাবি করছিলেন, দাদা অরবিন্দ দে-র সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ প্রায় ছিল না, রবিবার সেই বক্তব্য থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন তিনি। নতুন এই সব তথ্যের ভিত্তিতে অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর ব্যাপারেও পুলিশ নতুন করে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। রবিবার দুপুরে শেক্সপিয়র সরণি থানায় ডেকে পাঠানো হয় অরবিন্দের ভাই প্রতিবেশী অরুণ দে এবং তাঁর ছেলে অর্জুনকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৪:২৬
Share:

১৯৯৪ সাল। ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের কনসার্টে পিয়ানো বাজাচ্ছেন দেবযানী। ফাইল চিত্র

পার্থ দে-র কাকা অরুণ দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে দে পরিবার সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। অরুণবাবু এত দিন যে দাবি করছিলেন, দাদা অরবিন্দ দে-র সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ প্রায় ছিল না, রবিবার সেই বক্তব্য থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন তিনি। নতুন এই সব তথ্যের ভিত্তিতে অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর ব্যাপারেও পুলিশ নতুন করে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে।

Advertisement

রবিবার দুপুরে শেক্সপিয়র সরণি থানায় ডেকে পাঠানো হয় অরবিন্দের ভাই প্রতিবেশী অরুণ দে এবং তাঁর ছেলে অর্জুনকে। অরুণবাবুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের দাবি, তিনি এ দিন তাঁদের জানিয়েছেন, গত বছর মে মাসের মায়ের মৃত্যুর পর দাদা অরবিন্দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। তাঁদের দু’জনের মধ্যে প্রায় নিয়মিত কথা হতো বলেও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। মৃত্যুর দশ দিন আগেও দুই ভাইকে এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন। দুই ভাই শহরের দু’টি অভিজাত ক্লাবেও এক সঙ্গে গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

কী নিয়ে দুই ভাইয়ের কথাবার্তা হতো? পুলিশ জানিয়েছে, রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি-জমি বিক্রি নিয়ে কথা হতো বলে অরুণবাবু দাবি করেছেন। অরুণবাবু তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, পার্থর মানসিক অবস্থা যে খারাপ, এটা ওই সময়ে দাদা তাঁকে বলেছিলেন। পরিবার নিয়ে যে তিনি কিছুটা অশান্তির মধ্যে রয়েছেন— এমন ইঙ্গিতও তাঁকে দিয়েছিলেন। পুলিশের কাছে অরুণবাবুর দাবি, বিদেশে থাকার সময়ই পার্থ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় পার্থ নিয়মিত মানসিক অবসাদের ওষুধ খেতেন বলেও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন পার্থ। পুলিশকে অরুণবাবু জানিয়েছেন, অরবিন্দ তাঁকে জানিয়েছিলেন, কলকাতায় এসে পার্থ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন।

Advertisement

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অরুণবাবুর এই বয়ান তদন্তের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগে অরুণবাবু দাবি করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে দাদার কোনও সদ্ভাব ছিল না। এ দিন তিনি সেই কথা বলেননি।’’ পুলিশের দাবি, দাদার সঙ্গে নিয়মিত কথা হওয়ার কথা কেন তিনি প্রথমে চেপে গিয়েছিলেন, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর পরে অরুণবাবু বলেছিলেন, গত মে মাসে পার্থর জন্মদিনে তাঁরা দাদার বাড়িতে গেলে চিৎকার শুরু করে দেন ভাইপো। কিন্তু এ দিন অরুণবাবু জানিয়েছেন, ওই জন্মদিনে তাঁরা সপরিবারে আনন্দ করেছিলেন। পার্থও কোনও অশান্তি করেননি।’’

পুলিশের দাবি, পার্থর ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন চিরকুট থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারেছেন, মৃত অরবিন্দের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হত অরুণবাবুর। এর পরেই এ দিন থানায় ডেকে পাঠানো হয় সপুত্র অরুণবাবুকে। লাগাতার জেরায় দাদার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন অরুণবাবু। তবে দেবযানীর মৃত্যুর ব্যপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না বলে পুলিশের কাছে এ দিনও দাবি করেছেন অরুণবাবু ও তাঁর ছেলে অর্জুন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই বাড়ির আশেপাশের অনেক বাসিন্দাই পচা গন্ধ পেয়েছিলেন। অরুণবাবুরা তা কেন পেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

এর আগে ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটের একটি সলিসিটর ফার্মের আইনজীবীও দাবি করেছিলেন, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জমি বিক্রি করার জন্য তাঁর কাছে এসেছিলেন দুই ভাই। তবে তদন্তকারীদের দাবি, ওই জমির আসল মালিক ছিলেন অরুণ এবং অরবিন্দের বাবা গদাধর দে। ১৯৫৯ সালের জুন মাসে তিনি তাঁর স্ত্রী শান্তি দে-র নামে ‘ডিড অব ট্রাস্ট’ করে যান ওই জমিটি। মায়ের মৃত্যুর পর ওই ২৩ কাঠা ছয় ছটাক জমি অরবিন্দবাবু এবং অরুণবাবুর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। তবে কেউই নিজের অংশের নামপত্তন (মিউটেশন) করাননি বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্পত্তি কেনাবেচা নিয়ে তাঁদের দুই ভাইয়ের এই যৌথ প্রচেষ্টার কথা পুলিশকে জানাতে চাননি অরুণবাবু। তাই তিনি প্রথমে দাদার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলেননি। পুলিশের এই দাবি প্রসঙ্গে বিকেলে অরুণবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা বলার পুলিশকে বলেছি।’’

বাড়ি-জমি ছাড়াও আর কী সম্পত্তি ছিল অরবিন্দবাবুর?

পুলিশ জানিয়েছে, অরবিন্দবাবু, পার্থ এবং দেবযানীর নামে চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষের বেশি টাকা রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে টাকা তোলা হতো এটিএমের মাধ্যমে। অরবিন্দবাবু না পার্থ— কে টাকা তুলতেন এবং শেষ কবে এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ওই চারটি অ্যাকাউন্ট ছাড়াও, অরবিন্দবাবুর একটি জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল অরুণবাবুর সঙ্গে। যেখানে দুই ভাড়াটিয়ার টাকা জমা পড়ত। পুলিশের দাবি ওই অ্যাকাউন্টে কয়েক হাজার টাকা করে জমা পড়ত। পুলিশের কাছে অরুণবাবুর দাবি, তাঁর দাদা এবং তিনি ওই টাকা ব্যবহার করতেন। আজ, সোমবার এই বিষয়ে আরও জানতে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে গিয়ে পার্থর সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা। লালবাজার সূত্রের খবর, অরবিন্দবাবুর বন্ধু সলিসিটর সুবীর মজুমদারের সঙ্গেও কথা বলে রহস্যের জট ছাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement