ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা গাড়ির, মৃত ২

পুলিশ জানায়, বেলঘরিয়া থানা ও ডানলপ ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা এসে দুমড়ে যাওয়া গাড়িটির ভিতর থেকে তিন জনকে উদ্ধার করে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ব্রেক ডাউন ভ্যান এনে লরির নীচে আটকে থাকা গাড়িটিকে বার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৫
Share:

বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়িটি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

মেয়ে বলেছিলেন, রাত ১১টার মধ্যে বাড়ি ফিরবেন। না ফেরায় বারবার ফোন করে খোঁজ নিচ্ছিলেন বাবা। প্রতিবারই মেয়ে বলেন, গাড়িতে রয়েছেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবেন। রাত আরও বাড়তে ফোন এল থানা থেকে। জানানো হল, উনিশ বছরের ওই তরুণী দুর্ঘটনায় পড়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন এক বন্ধু এবং বান্ধবীও।

Advertisement

সোমবার বিকেলে বাড়ির সামনে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন পূর্ণিমা দাস। রবিবার রাতে বি টি রোডে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর মেয়ে টুম্পা এবং মেয়ের বন্ধু, বছর চব্বিশের শাহ সাউদ ওরফে ফারহান। পূর্ণিমাদেবী বললেন, ‘‘যেখানেই যাক, রাত ১১টার মধ্যে ফিরে আসত। কাল আর ফিরল না।’’ অন্য দিকে, দুর্ঘটনায় মৃত গাড়িচালক ফারহানের পরিবারও কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। নারকেলডাঙা মেন রোডের বাসিন্দা ওই যুবকের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘কোথায় গিয়েছিল, জানি না। রাতে পুলিশ খবর দিল।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ কামারহাটির দিক থেকে বি টি রোড দিয়ে ডানলপের দিকে আসছিল একটি মালবোঝাই দশ চাকার লরি। বেলঘরিয়া থানা থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে নীলগঞ্জ রোডের মোড়। তার সামনে এসেই রাস্তার বাঁ দিক চেপে গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে যায় লরিটি। পিছনে তীব্র গতিতে ছুটে আসা চার চাকার একটি ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই লরির পিছনে ধাক্কা মেরে তার নীচে ঢুকে যায়। পুরো দুমড়ে যায় গাড়িটির সামনের অংশ। চালকের আসনে বসা ফারহান ও তাঁর পাশে বসা টুম্পা গুরুতর জখম হন। পিছনের আসনে ছিলেন ঝিলিক দত্ত নামে টুম্পার এক বান্ধবী। তিনিও হাতে, মুখে ও চোখে চোট পান।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বেলঘরিয়া থানা ও ডানলপ ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা এসে দুমড়ে যাওয়া গাড়িটির ভিতর থেকে তিন জনকে উদ্ধার করে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ব্রেক ডাউন ভ্যান এনে লরির নীচে আটকে থাকা গাড়িটিকে বার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ফারহান ও টুম্পা মারা যান। পুলিশ জানায়, গাড়িটি ফারহানের নয়, তাঁর জামাইবাবুর। নিজে ভাল করে গাড়ি চালাতে না জেনেও ওই যুবক কাউকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ফারহান একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন।

এ দিন কাঁকুড়গাছিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরেই একচিলতে ঘর টুম্পাদের। বাবা দিলীপবাবু অটো সারান। মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই তরুণী। পাশের বাড়িতেই থাকেন ঝিলিক। তিনি জানান, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ফারহানের সঙ্গে তাঁরা বেরোন। ধর্মতলা ঘুরে পরে বেলঘরিয়ায় এক বন্ধুর বিয়েতে যান। সেখান থেকে গাড়িতে ওঠেন আর এক বন্ধু। তাঁকে কামারহাটিতে নামানোর পরে গাড়ি নিয়ে তিন জন বাড়ির দিকে আসার সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা। ঝিলিক বলেন, ‘‘ফারহানকে আস্তে চালাতে বলেছিলাম। গতি কম থাকলে হয়তো এমনটা ঘটত না।’’

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘ভাল করে চালাতে না জেনেও ওই যুবক মত্ত অবস্থায় রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ নিয়ে এত প্রচারের পরেও যদি কেউ কথা না শোনেন, তা হলে এমনই পরিণতি হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement