৬২ বছর পর হিমাচলের ‘কুলু মাকালু’ শৃঙ্গ (৬৩৫০ মিটার) ধরা দিল দুই বাঙালির কাছে। ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘ ৬২ বছর এই খাড়াই পাথুরে দেওয়াল বেয়ে কেউ উঠতে পারেননি। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ২৫০০ ফুট উঁচু, প্রায় উল্লম্ব ওই দেওয়ালের আড়াল পেরিয়ে কেউ ছুঁতে পারেননি শীর্ষ। অবশেষে সেই খরা কাটিয়ে হিমাচলের ‘কুলু মাকালু’ শৃঙ্গ (৬৩৫০ মিটার) ধরা দিল দুই বাঙালির কাছে। শনিবার সকালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই কঠিন শৃঙ্গের শিখরে পৌঁছে ইতিহাস গড়লেন রাজশেখর মাইতি এবং প্রদীপ বর। সঙ্গে চার শেরপা।
হিমাচলের কুলু এবং লাহুল-স্পিতি জেলার সীমানায় অবস্থিত, দুর্গম দিবিবকরি হিমবাহের মাথার দিকে থাকা এই কুলু মাকালু ওরফে ‘লাল কিলা’ শৃঙ্গে ১৯৬১ সালে প্রথমসফল আরোহণ করেছিল ইটালির এক পর্বতারোহী দল। তার পরে থেকে এত দিন অধরা ছিল এটি। তবে বাধা কাটিয়ে গত শনিবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ চার শেরপা— পূর্বা শেরপা, লপসাং শেরপা, দাওয়া শেরপা এবং বিরে শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় সফল আরোহণ করেনরাজশেখর-প্রদীপ জুটি। গড়িয়ার বাসিন্দা, পেশায় কর্পোরেট ব্যাঙ্ককর্মী বছর আটচল্লিশের রাজশেখর পোড়খাওয়া আরোহী, দেশের একাধিক পর্বতারোহণ অভিযানে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। হাওড়ার বাসিন্দা, বছর বত্রিশের প্রদীপ একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
দক্ষিণ কলকাতার একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের পক্ষ থেকে গত বছরই এই শৃঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু অত্যধিক কঠিন এই শৃঙ্গের সামিটের মাত্র ১৭৫ মিটার দূর থেকে ফিরে আসতেহয়েছিল অভিযাত্রী অভীক মণ্ডলকে। সেই অভিযান দলের সদস্য আশিস গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রথম সফল অভিযাত্রী দলের কেউই আজ বেঁচে নেই। তাই মাত্র এক টুকরো লেখা ছাড়া এই শৃঙ্গ সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাইনি আমরা। গত বার কার্যত অন্ধকারে হাতড়েছিলাম। শেষে সামিটের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।তাই খুব কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়। কিন্তু সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি সে বারই হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছিল।’’ তাই এ বার ফের কুলু মাকালুতেই অভিযান চালায় ওই পর্বতারোহণ ক্লাব।
ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলু মাকালু এবং তার পড়শি রুবেল কাং শৃঙ্গাভিযানের উদ্দেশে গত ৯ জুন রওনা হয়েছিলেনদলনেতা রাজশেখর-সহ মোট সাত জন। তবে চেনা ‘পথে’ও প্রতিকূল অবস্থার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। আশিস জানাচ্ছেন, খারাপ আবহাওয়া এবং অত্যধিক বরফপাতের কারণে প্রায় হাঁটুসমান বরফ ঠেলেএগিয়েছেন অভিযাত্রীরা। তবে প্রধান বাধা ছিল ছ’হাজার মিটার উচ্চতার উপরে সেই খাড়াই পাথুরে দেওয়াল— ১৯৬১ সালের পরে যা কেউ টপকাতেই পারেনি। সেই দেওয়ালে প্রথম অভিযানে ব্যবহৃত ‘পিটন’দেখতে পেয়েছেন সামিটগামী রাজশেখরেরা।
ক্লাব সূত্রের খবর, শনিবার ভোরে ক্যাম্প ৪ থেকে ‘সামিট পুশে’ বেরোন ওই দু’জন। শৃঙ্গেরদক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পাথুরে রুট ধরে, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে পৌঁছন শীর্ষে। রবিবার তাঁরা ক্যাম্প ১-এ নেমে এসেছেন। একই সঙ্গে গত শুক্রবার পড়শি শৃঙ্গ রুবেলকাং-এর শীর্ষে পৌঁছন ওই দলের সদস্য, বারাসতের শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।