ছবি: রয়টার্স।
পুলিশি জেরার সময়ে ধৃতকে মারধরের কৌশল কার্যত বাতিলই হয়ে গিয়েছে মানবাধিকারের নজরদারিতে। এ বার অভিযুক্তের বন্ধু হয়ে তাঁকে এক রকম পাশে বসিয়ে জেরার পাঠ নিচ্ছে পুলিশ।
সম্প্রতি দিল্লিতে এ দেশের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার সামনে পুলিশি জেরার এই পদ্ধতির কথাই বলে গেলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (ফেডারাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) -এর কর্তারা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (স্পেশাল) বদনা বরুণ চন্দ্রশেখর এই তালিমে সামিল হয়েছিলেন। সম্প্রতি লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে এফবিআই-এর এমন দাওয়াই নিয়ে বৈঠকও করেছেন ওই পুলিশকর্তা।
আপাতত অবশ্য লালবাজারের জেরার কৌশলের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দাদের কৌশলে আসমান-জমিনের ফারাক। তদন্তে পারদর্শিতার জন্য এক সময়ে বিলেতের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে লালবাজারের তুলনা হলেও জেরার ধাঁচে মিশে থাকত ঔপনিবেশিক প্রভুদের মানসিকতা। পুলিশ মহলের মতে, এখনও অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে মাটিতে বসিয়ে ভয় দেখিয়ে জেরা করাই দস্তুর। ‘ভদ্র ঘরের’ অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে অবশ্য দরকারে ‘বাবা-বাছা’ করার কৌশলও নিয়ে থাকে পুলিশ। কিন্তু এখনও সামাজিক মর্যাদাহীন, পোড় খাওয়া চোর, ছিনতাইবাজ বা মাদকাসক্তদের তুই-তোকারি করে জেরা করাই দস্তুর। শুধু কলকাতা পুলিশ নয়, দেশের অন্যত্রও পুলিশি জেরার ধরন এর থেকে আলাদা নয়। এফবিআই এখন জেরার এই ধাঁচটাই পাল্টাতে বলছে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, নরম স্বরে অভিযুক্তকে সহ-নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে কথা বললেই সহজে তার আস্থা অর্জন করা সম্ভব। লালবাজারের কর্তারা এই উপদেশ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কিন্তু তাঁদের কারও মত, আমেরিকার বাস্তবতা আর এ দেশের রীতি এক নয়। পাকেচক্রে দুষ্কর্ম করে ফেলা শিক্ষিত পরিমণ্ডলের অভিযুক্তের ক্ষেত্রে ভাল ব্যবহারে আস্থা অর্জন করা গেলেও পাকা দুষ্কৃতীরা পুলিশের এই সংবেদনশীলতাকে দুর্বলতা বলেও ধরে নিতে পারে। সুতরাং, জেরায় অভিযুক্তের ধাত বুঝে নরমে-গরমে এগোনোই ভাল। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি মেনে অভিযুক্তদের জেরার সময়ে তাঁর উপরে অত্যাচার, মারধরের দিন শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই মত লালবাজারের কর্তাদের।