চালকের শেখার ভুলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, তার জন্য শুধু সংশ্লিষ্ট চালক নন, তাঁকে যিনি লাইসেন্স দিয়েছেন বা তিনি যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, দায়ী হবেন তাঁরাও। মোটর ট্রেনিং স্কুলের মালিকদের সঙ্গে পরিবহণ দফতরের সভায় এমনটাই জানিয়ে দিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ— সব পক্ষই। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আগে চালকেরা বিভিন্ন স্কুলে যে প্রশিক্ষণ নেন, সে জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যবইও তৈরির কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মাস ছয়েকের মধ্যে আমরা পাঠ্যবই তৈরি করে তা স্কুলগুলিকে দেব।’’
পাশাপাশি, দফতর বা সড়ক— কোথাও যে বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘‘চালকের জায়গায় গাড়ি খালাসি চালাচ্ছেন, এ সব চলবে না। চালককে লাইসেন্স গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’’ একই সঙ্গে, ব্যক্তিগত ভাবে যাঁরা পরিবহণ দফতর থেকে লাইসেন্স নিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দায়ী করা হবে।
৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা কমাতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প চালু করেছেন। সেই প্রকল্প বাস্তবায়নেই এ দিন মোটর ট্রেনিং স্কুলের মালিকদের সভা ডেকেছিল সরকার। পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অতীতে কর্মসংস্থানের নিরিখে অনেক সময়েই চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিল হত পরিবহণ দফতর। এখন দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনায় অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে দায়ী চালক। তাই, প্রাণ বাঁচানোর নিরিখে মোটর স্কুলগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হবে। দফতর কড়া হবে স্কুলগুলির লাইসেন্স নবীকরণের ক্ষেত্রেও। এক ধাপ এগিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন আর আরটিও মোটর স্কুলগুলিকে লাইসেন্স দেবে না। তারা সুপারিশ করে তা পরিবহণের সদর দফতরে পাঠাবে। সেখানে দু’তিন জন কর্তাকে নিয়ে তৈরি বিশেষ দল চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
বাণিজ্যিক গাড়ির আঁতুড়ঘর মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলি। অথচ, সেই স্কুলগুলির বেশির ভাগই নিয়ম মেনে চালকদের প্রশিক্ষণ দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে স্কুল ও মোটর ভেহিক্ল ইনস্পেক্টরদের যোগসাজশে টাকা দিয়ে লাইসেন্স পেয়ে যান অনেকেই। পথ দুর্ঘটনা কমাতে হলে চালক তৈরির আঁতুড়ঘরেই শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজনে বলে মনে করছে পরিবহণ দফতর। সে জন্যই মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলির উপরে নিয়মিত নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি এ রাজ্যে মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলি হাল খতিয়ে দেখতে আইআইটি খড়্গপুরের একটি দলকে দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। ওই দলটির পক্ষে ভার্গব মৈত্র এ দিন বলেন, ‘‘স্কুলগুলিকে আরও পেশাদার হয়ে উঠতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলের প্রশিক্ষকেরা কী পড়াবেন, কী কী বিষয়ের উপরে জোর দেবেন, তা নির্দিষ্ট করতে তাঁদের জন্য একটি তিন মাসের সার্টিফিকেট কোর্সের ব্যবস্থা করতে পারে রাজ্য সরকার।’’ স্নাতকস্তরের পাঠ্যক্রমে ভোকেশনাল বিষয় হিসেবে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংকে অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলকেও। যে চালককে স্কুল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তিনি যে শারীরিক ভাবে সক্ষম ও গাড়ি চালানোয় প্রশিক্ষিত— তারও শংসাপত্র দেবে স্কুল।