Tram

ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে আবার গড়াতে পারে ট্রামের চাকা

আগামী বছর কলকাতার ট্রাম সার্ধশতবর্ষে পা দিচ্ছে। ট্রামের দেড়শো বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে কী করা যায়, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে পরিবহণ দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২৭
Share:

সরব: বন্ধ থাকা ট্রামরুটগুলি চালুর দাবিতে সম্প্রতি পথে নামেন এক ট্রামপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র

ঘূর্ণিঝড় আমপান আছড়ে পড়ার আড়াই বছর পরেও খিদিরপুর-এসপ্লানেড রুট সচল না হওয়ায় সম্প্রতি পথে নেমেছিলেন শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। দীর্ঘদিন রুট বন্ধ থাকায় কলকাতা ময়দানের সবুজ প্রান্তর ঘেঁষে চলা ওই ট্রামরাস্তার অনেক জায়গাতেই লাইন ঘাসে ঢেকে গিয়েছে। ট্রাম নিয়ে সরকারি ‘অবহেলা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগাছায় ঢেকে যাওয়া লাইনের ঘাস ছেঁটে প্রতিবাদ জানান ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স সোসাইটি’র সদস্যেরা। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা ওই রুট এ বার খুলে দিতে তৎপর হয়েছে পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি দফতরের আধিকারিকদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

Advertisement

আগামী বছর কলকাতার ট্রাম সার্ধশতবর্ষে পা দিচ্ছে। ট্রামের দেড়শো বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে কী করা যায়, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের তৎপর হতে বলেছেন মন্ত্রী। এসপ্লানেড থেকে খিদিরপুর, অর্থাৎ ৩৬ নম্বর রুটের একাংশে ময়দান ঘিরে একটি ‘লুপ’ তৈরির কথাও বিবেচনা করছে পরিবহণ দফতর। কলকাতা ময়দান ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে পাশে রেখে ছুটে যাওয়া ট্রামের জন্য ওই লুপ মূলত পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। ময়দানের শোভা তুলে ধরাই ওই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য বলে খবর। পাশাপাশি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ মিটে গেলে যে সব রুটে কোনও সমস্যা ছাড়াই ট্রাম চালানোর সুযোগ রয়েছে, সেখানেও ট্রাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

২০১৬ সালেও যেখানে কলকাতায় ২৫টির বেশি ট্রাম রুট সচল ছিল, সেখানে ২০২২ সালে ওই সংখ্যা কমতে কমতে মাত্র দুইয়ে এসে ঠেকেছে। এখন টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়াহাট এবং এসপ্লানেড থেকে বালিগঞ্জ, শুধু এই দু’টি রুটে ট্রাম সচল রয়েছে।

Advertisement

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য বি বা দী বাগ থেকে চিৎপুর, বৌবাজার এবং কলেজ স্ট্রিট দিয়ে চলা ট্রাম রুট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে মেট্রোর সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচলের শ্যাফট তৈরির কাজের জেরে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটেও ট্রাম চলাচল বছরখানেক ধরে বন্ধ। এর ফলে শ্যামবাজার এবং কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার রুট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিয়ালদহে বিদ্যাপতি সেতুর স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে ওই উড়ালপুলের উপরেও ট্রাম চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে লেনিন সরণি এবং কলেজ স্ট্রিট হয়ে রাজাবাজার, উল্টোডাঙা, মানিকতলা যাওয়ার ট্রাম বন্ধ। টালা সেতু বন্ধ থাকার সময়ে বেলগাছিয়া সেতুর উপরে চাপ বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে ওই সেতুতে ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তার পরে বেলগাছিয়া ডিপো কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে। কয়েক মাস আগে ওই ডিপোয় প্রবেশের ট্রামলাইনও পিচ দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে ট্রামপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন। ভাল অবস্থায় থাকা প্রায় ৩০টি ট্রাম ওই ডিপোয় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ ট্রামপ্রেমী সংগঠনের। মাসখানেক আগে টালা সেতু চালু হওয়ায় উত্তরের পথে ট্রাম ফিরিয়ে আনার দাবি নিয়ে সরব হয়েছে সিটিইউএ।

রাস্তায় যানজটের দায় একতরফা ভাবে ট্রামের উপরে না চাপিয়ে কম খরচের পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ হিসাবে ট্রামের গুরুত্ব খতিয়ে দেখা জরুরি, বলছেন তাঁরা। আগামী দিনে শহরে মেট্রোপথের বিস্তার ঘটলে বিভিন্ন মেট্রো রুটের পারস্পরিক সংযুক্তি ছাড়াও বিভিন্ন স্টেশনের ফিডার পরিষেবা হিসাবে ট্রাম কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement