বিপদ-সরণি শাসনে ‘ডাহা ফেল’ পুলিশ

গত সোমবার রাতে উল্টোডাঙা মেন রোডে তেলেঙ্গাবাগান মোড়ের কাছে দু’টি বাসের রেষারেষিতে মৃত্যু হয় হেলমেটহীন দুই স্কুটি আরোহীর।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইউ-টার্ন। উল্টোডাঙায়। ছবি: শৌভিক দে

পরপর মৃত্যুতেও টনক নড়ল না পুলিশ-প্রশাসনের।

Advertisement

গত চার দিনে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। গুরুতর জখম আরও তিন জন। এঁদের মধ্যে এক জন হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, উল্টোডাঙা মেন রোডে প্রায় প্রতি দিনই দুর্ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘ডাহা ফেল’ প্রশাসন। নতুন পদক্ষেপ করা তো দূর, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও রূপরেখাই দেখাতে পারেনি। ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে শুধু দাবি করা হয়েছে, ‘‘নজরদারি ছিলই, এ বার সেই নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

গত সোমবার রাতে উল্টোডাঙা মেন রোডে তেলেঙ্গাবাগান মোড়ের কাছে দু’টি বাসের রেষারেষিতে মৃত্যু হয় হেলমেটহীন দুই স্কুটি আরোহীর। গুরুতর জখম হন আরও এক জন। পরের দিনই, মঙ্গলবার রাতে মুচিবাজারে নবনির্মিত ‘গীতাঞ্জলি ঘড়ি’র সামনে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক জনের। এই দুই ঘটনাই উল্টোডাঙা মেন রো়ডে পুলিশি নজরদারি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দেয়। এর মধ্যেই বুধবার রাতে ওই এলাকায় ফের মোটরবাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দু’জন। তাঁদের আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, বারবার কেন দুর্ঘটনার কেন্দ্রে উল্টোডাঙা মেন রোড! এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও একে ‘মারণ জ়োন’ বলছেন। কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘সব ঘটনা এখানেই ঘটছে। ট্র্যাফিক পুলিশকে বলেছি, এটা তো মারণ জ়োন হয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যবস্থা করুন!’’

তবে লাগাতার দুর্ঘটনার জন্য শুধু ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে নয়, গোটা উল্টোডাঙা মেন রোডের পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বহু দিন ধরেই এই রাস্তার দু’দিকের ফুটপাতের দখল নিয়েছেন হকারেরা। এখন বিধাননগর স্টেশন থেকে উল্টোডাঙা মেন রোড, অরবিন্দ সরণি হয়ে হাতিবাগান পর্যন্ত— এই রাস্তায় বসে কলকাতার সব থেকে বড় বাজার। গৌরীবাড়ি এলাকায় সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। ফলে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তাই বড় সম্বল নিত্যযাত্রীদের। রাজু পাল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এই বাজার কেউ সরাতে পারবে না। বড় মাথাদের হাত আছে এখানে।’’ বছরখানেক আগেই এই লম্বা বাজার ফুটপাত থেকে সরিয়ে এক ছাদের নীচে আনার পরিকল্পনা করেছিল প্রশাসন। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

উল্টোডাঙা মেন রোডের সঙ্গে যুক্ত নানা ছোট রাস্তা। তবে সেগুলির বেশির ভাগের মুখে ট্র্যাফিক সিগন্যাল নেই। ফলে যখন-তখন বাইক, গাড়ি নিয়ে উল্টোডাঙা মেন রোডে ঢুকছেন চালকেরা। এই রাস্তাতেই সরকারি, বেসরকারি বাস, ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি চারটি রুটের অটো চলে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে যে কোনও মুহূর্তে। উল্টোডাঙা সংলগ্ন কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলছেন, ‘‘ট্র্যাফিক কিয়স্ক রয়েছে মাত্র তিনটে। হঠাৎ করে গলির রাস্তা থেকে গাড়ি বেরোলে ধাক্কা তো লাগবেই! অটোগুলো বেশি সমস্যা করে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে উল্টোডাঙা মেন রোডে সংযুক্ত রাস্তাগুলির মুখে ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাগানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। বছর ঘুরলেও তা হয়নি। এ বিষয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা মন্তব্য করতে চাননি। তবে এলাকাটি কলকাতা পুলিশের মানিকতলা এবং উল্টোডাঙা থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। দুই থানারই ট্র্যাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনা সবসময় হয় এমন নয়। তবে ঘটে গেলে কিছু করার থাকে না।’’

মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলছেন, প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব। এ ভাবে মৃত্যু মানা যায় না।’’ শুধু কি তবে মৃত্যু হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এত দিন ব্যবস্থা হয়নি কেন? সাধনবাবুর কাছে এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement