বিপত্তি: উল্টোডাঙা উড়ালপুল বন্ধ থাকায় ভিআইপি রোডে যানজট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
তৈরি হওয়ার মাত্র দু’বছরের মাথায় কেষ্টপুর খালে ভেঙে পড়েছিল একটি অংশ। এ বার গায়ে ফাটল দেখা দেওয়ায় তিন দিনের জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হল সেই উল্টোডাঙা উড়ালপুলে। যার জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রবল যানজট তৈরি হল ওই এলাকায়। আটকে পড়ল অসংখ্য গাড়ি। বাদ গেল না অ্যাম্বুল্যান্সও। কেএমডিএ জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজ করেই ফের ওই উড়ালপুল খুলে দেওয়া হবে।
কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘উল্টোডাঙা উড়ালপুলে হঠাৎ ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ওই উড়ালপুলের দু’দিকের যান চলাচলই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে উড়ালপুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উল্টোডাঙা মোড়, কাঁকুড়গাছি এবং ই এম বাইপাস-সহ ওই এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বাইপাসের যানজটে আটকে উড়ান ধরতে বেগ পেতে হয় অনেককে। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি কমিটি ওই উড়ালপুলটি পরীক্ষা করছিল। তখন ভিআইপি রোড থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার দিকে ফাটল ধরা পড়ে।
পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১১ সালে উল্টোডাঙা উড়ালপুল তৈরির কাজ শেষ করেছিল নির্মাণকারী সংস্থা ম্যাকিনটোশ বার্ন। তৈরি হওয়ার পরে একটি উড়ালপুলের প্রায় সত্তর বছর ঠিকঠাক থাকার কথা। কিন্তু চালু হওয়ার পর থেকেই বারবার ওই উড়ালপুলে কেন সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে বুধবার ওই নির্মাণ সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’
২০১৩ সালের ৪ মার্চ ওই উড়ালপুলের একটি ডেক ভেঙে পড়েছিল। খুব ভোরে ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসের দিকে যাওয়ার সময়ে একটি ট্রাক উড়ালপুলের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। তার পরেই ডেকটি ভেঙে পড়ে কেষ্টপুর খালে। ওই ঘটনায় ট্রাকের চালক ও খালাসি গুরুতর জখম হন। কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, যে ডেকটি ভেঙেছিল, সেটি অনেকটা কাস্তের মতো বাঁকা ছিল। ভিলাইয়ের ‘ন্যাশনাল স্টিল প্লান্ট’ থেকে ইস্পাত এনে হাওড়ার আলমপুরে ওই ডেকের কাজ হয়েছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফের চালু হয় ওই উড়ালপুল।
ওই উড়ালপুলে ফের ফাটল দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় কেএমডিএ। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফাটল চিহ্নিত করার পরেই আমরা কলকাতা পুলিশকে উড়ালপুলটি পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছি। বুধবার বিশেষজ্ঞেরা উড়ালপুলটি ফের পরিদর্শন করবেন। তার পরে মেরামতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উড়ালপুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেলেঘাটা কানেক্টর থেকে বাইপাসমুখী গাড়ি ধীর গতিতে হলেও চলছিল। বাইপাস হয়ে উল্টোডাঙা যেতে গিয়েই সেই যানজট আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। যাদবপুরের বাসিন্দা রমনা সেনগুপ্ত বিমানবন্দরে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছতে তাঁর সময় লাগে তিন ঘণ্টা। রমনাদেবীর কথায়, ‘‘ভাগ্যিস, সময় নিয়ে বেরিয়েছিলাম। না হলে ফ্লাইট মিস করতাম।’’