যানজটে হাঁসফাঁস, বিকল্প পথের খোঁজ

নিজস্ব সংবাদদাতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নে বলেন, ‘‘মাঝেরহাট সেতুর নীচে একটি রাস্তা রয়েছে। রেলের লেভেল ক্রসিং রয়েছে। রেল যদি ওখানে রাস্তা করার অনুমতি দেয় তা হলে আমরা করতে পারি। গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে। মুখ্যসচিব বিষয়টি নিয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলবেন।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

শম্বুক গতি: খিদিরপুরের জট-ছবি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পর থেকে লাগাতার যানজট চলছে শহরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার অতিরিক্ত বাহিনী রাস্তায় নামানোর কথা ভাবছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রে খবর, পুজোয় চাপ সামলাতে যেমন অতিরিক্ত বাহিনী রাস্তায় নামে ঠিক তেমনই করার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও পুলিশেরই একটি সূত্র প্রশ্ন তুলেছে, পুজো তো কয়েক দিনের ব্যাপার। কিন্তু এই যন্ত্রণা তো দীর্ঘস্থায়ী হবে। সে ক্ষেত্রে টানা অতিরিক্ত বাহিনীকে রাস্তায় কাজ করানো সম্ভব কি?

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নে বলেন, ‘‘মাঝেরহাট সেতুর নীচে একটি রাস্তা রয়েছে। রেলের লেভেল ক্রসিং রয়েছে। রেল যদি ওখানে রাস্তা করার অনুমতি দেয় তা হলে আমরা করতে পারি। গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে। মুখ্যসচিব বিষয়টি নিয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলবেন।’’

মঙ্গলবার সেতু ভেঙে পড়ার পর থেকেই কলকাতা ও বেহালার যান চলাচল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘুরপথে যান চলাচল শুরু হলেও যানজট এড়ানো যায়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেই যানজট নাগালের বাইরে চলে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, বিদ্যাসাগর সেতুতে গাড়ির লাইন প়ড়ে যাওয়ায় হাওড়া থেকে আসা গাড়ি হাওড়া ব্রিজ দিয়ে শহরে ঢোকানো হয়। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সেতু বিপর্যয়ের আগে পণ্যবাহী গাড়ি রাত ১০টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত চলত। এখন তা রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে চলছে। বুধবার রাত ১১টা বাজতেই প্রচুর পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকে পড়ে। একই সঙ্গে প্রচুর গাড়ি বন্দর থেকে কলকাতার বাইরে যাওয়ার পথ ধরে। তাতেই সব তালগোল পাকিয়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: রেলিং থেকে পথ, জরাজীর্ণ সবই

সকাল গড়াতেই বেহালা ও কলকাতার মধ্যে যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল বাড়তে শুরু করে। তার চাপে হাইড রোড, আলিপুর রোড, নিউ আলিপুর, চেতলা, দুর্গাপুর ব্রিজ এলাকা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে প়ড়ে। চাপ পড়ে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, দেশপ্রাণ শাসমল রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে। বন্ধ করে দেওয়া হয় এস এন রায় রোড। কিছু বাসকে করুণাময়ী সেতু, হরিদেবপুর দিয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে ওই সরু রাস্তায় গাড়ি বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। যানজটে সমস্যা হয় অটো চলাচলেও।

লালবাজারের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ আংশিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। গা়ড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বিপর্যস্ত এলাকায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল এবং যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মিতেশ জৈন। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরে সন্তোষ রায় রোড এবং আলিপুর রোড দিয়ে একমুখী গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তাতে কিছুটা জট কাটে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি কাটতে না কাটতেই ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের জেরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই চাপ গিয়ে পড়ে আশপাশের রাস্তাগুলিতেও। জওহরলাল নেহরু রোড এবং এক্সাইড মোড়ে যান চলাচল ঢিমে হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক মিছিলের জেরে দুপুরের কিছুটা সময় হাওড়া ব্রিজও অবরুদ্ধ ছিল। একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানিকতলা মেন রোডেও অবরোধ করেন স্থানীয়দের একাংশ।

মাঝেরহাট সেতুই ছিল কলকাতা ও বেহালার মধ্যে যান চলাচলের মূল রাস্তা। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে গার্ডেনরিচ রোড, হাইড রোড, ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড দিয়ে ঘুরপথে গাড়ি চালানো হচ্ছে। কিন্তু বন্দরের ওই এলাকায় প্রচুর পণ্যবাহী গাড়িও থাকে। তার উপরে রাস্তার তথৈবচ দশা। ফলে সকালে বাস চলাচল শুরু হতেই যানবাহনের গতি ঢিমে হয়ে যায়। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাতে পণ্যবাহী গা়ড়ি চলাচল শুরু হতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যানজট কাটাতে বন্দর এলাকায় আরও একটি বিকল্প রাস্তা হিসেবে গড়াগাছা রোডকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ওই রাস্তারও বেহাল দশা। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাস্তা মেরামতি করা হলে কিছুটা জট কাটতে পারে। কিন্তু দ্রুত ওই রাস্তার মেরামতি সম্ভব কি? সেটাই এখন প্রশ্ন।

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement