Maniktala Assembly by Elections 2024

বহুতলের মন ফেরানোই পাখির চোখ তৃণমূলের, নজরে মানিকতলা

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা-ভিত্তিক ফলের নিরিখে তৃণমূল বিজেপির তুলনায় মাত্র ৮৬১ ভোটে এগিয়ে ছিল। তবে, ২০২১ সালে সাধন পাণ্ডে (অধুনা প্রয়াত) সেই ব্যবধান বাড়িয়ে প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

Advertisement

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৫:৩৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

মুচিবাজার থেকে বিধাননগর রোড স্টেশনের দূরত্ব মেরেকেটে দেড় কিলোমিটার। আর এইটুকু দূরত্বের মধ্যেই সম্প্রতি প্রচারের মাঝে দেখা মিলল মানিকতলা বিধানসভা উপনির্বাচনের তিন প্রার্থী— তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্তি পাণ্ডে, বিজেপির কল্যাণ চৌবে ও সিপিএমের রাজীব মজুমদারের। পৃথক প্রচার কৌশলে প্রথম দু’জন লড়ছেন জেতার লড়াই। তৃতীয় জনের লড়াই ভোট বাড়ানোর।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা-ভিত্তিক ফলের নিরিখে তৃণমূল বিজেপির তুলনায় মাত্র ৮৬১ ভোটে এগিয়ে ছিল। তবে, ২০২১ সালে সাধন পাণ্ডে (অধুনা প্রয়াত) সেই ব্যবধান বাড়িয়ে প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান আবার কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারের আশপাশে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে মানিকতলার মধ্যে ১৬ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে আছে বিজেপি। এই উপনির্বাচনে সেই ব্যবধান বাড়ানোই লক্ষ্য শাসকদলের। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘আশা করছি, লোকসভার ব্যবধানের উপরে আরও অন্তত ২০ হাজার ব্যবধান যোগ হবে।”

তৃণমূল শিবিরের অন্দরের খবর, পাণ্ডে পরিবারকে টিকিট দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যেই ভিন্ন মত আছে। তবে উপনির্বাচনে আকস্মিক কোনও ফলাফল যাতে না হয়, তাই কুণালকে আহ্বায়ক করে অতীন ঘোষ, পরেশ পাল ও স্বপন সমাদ্দারকে নিয়ে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় নাম জড়ানোয় সাধন-কন্যা, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ শ্রেয়াকে নির্বাচনী প্রচারের কাজ থেকে দূরে রাখছে তৃণমূল।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে হিন্দিভাষী এলাকায় ও বহুতল আবাসনে বাড়তি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ফল ঘোষণা হতে সেই আবাসনগুলিতে তৃণমূলের পতাকা লাগানো অটো নিয়ে ঢুকে, ডিজে বাজিয়ে ‘তাণ্ডব’ চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। যে ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে পরে কুণাল স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিকে নিয়ে আবাসনে গিয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন। সেই ঘটনা মাথায় রাখছে তৃণমূল। তাই হিন্দিভাষী এলাকা ও আবাসনের জন্য বিশেষ দল তৈরি করেছে তারা। দীনেশ বজাজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হিন্দিভাষী এলাকায় গিয়ে বৈঠকি সভা করে বোঝানোর জন্য। আরও একটি দলকে বলা হয়েছে, পতাকা ছাড়া বহুতলে যেতে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলে আবাসিকদের তৃণমূলের পক্ষে আনার চেষ্টা করতে। তৃণমূলের দাবি, ভোটের ফল অনেকটাই ‘নিশ্চিত’। কিন্তু হিন্দিভাষী এলাকা ও বহুতলে হারানো জনসমর্থন ফিরে পাওয়াই এই উপনির্বাচনে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।

উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী রাজীব মজুমদারের সমর্থনে মুচিবাজারে সমাবেশ করছিল এসএফআই। সেই সমাবেশে বক্তৃতা শুরুর আগে রাজীব বলে গেলেন, “সবাই বলছে, সিপিএম শেষ। সিপিএম শূন্য! তার পরেও মানিকতলার পাড়ায়, গলিতে সিপিএম পতাকা লাগিয়েছে। সভা-সমিতি করেছে। এটাই আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।” মঞ্চে উঠে বললেন, ‘‘বিধানসভায় অন্তত এক জন বিরোধী বিধায়ক থাকা প্রয়োজন। যিনি অন্তত মানুষের দৈনন্দিন দুঃখ-দুর্দশা বিধানসভার মধ্যে তুলে ধরবেন।” কয়েক পা এগিয়ে বাস ডিপোর সামনে তখন তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের সভায় বক্তৃতা করছেন সুপ্তি। তাঁর দাবি, “মানিকতলায় সাধন পাণ্ডে একটা ব্র্যান্ড। আমরা সারা বছর মানুষের কাজ করি। তাই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।”

আর একটু এগোতে বিধাননগর রোড স্টেশন লাগোয়া বহুতল আবাসনের ১১তলায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন কল্যাণ। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। কল্যাণ বললেন, “খারাপ ফল হলে সাময়িক হতাশা তো আসেই। কিন্তু তা বলে লড়াই তো ছেড়ে দেওয়া যায় না। জেতার জন্যই লড়াই করব। মানুষ ভোট দিতে পারলে আমাদের ভাল ফল হবে।”

কিন্তু মানুষ কী বলছেন? স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘আমরা তো তৃণমূলকেই ভোট দিই। তবু আমার পরিবারই গত পুর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ভোটের লাইনে দাঁড়াব। তার পরে দেখা যাক!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement