হঠাৎ শীতে রোগ ঠেকাতে পরামর্শ আগাম সতর্কতার

চিকিৎসকদের বক্তব্য, ধীরে ধীরে পারদের পতন হলে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেকটা সহজ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

দিন তিনেক আগেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সেটাই হল ১১.৬!

Advertisement

যেখানে ডিসেম্বরের মাঝেও হাফ সোয়েটার তোলা থাকছিল আলমারিতে, সেখানে এক ধাক্কায় ফুলহাতা সোয়েটার, মাফলার, টুপি— উত্তুরে হাওয়ার দাপট ঠেকাতে বেরিয়ে পড়েছে সব শৈত্য-অস্ত্র। শীতের আমেজ শহরবাসীর মুখে হাসি ফোটালেও কিন্তু বাড়ছে রোগভোগের আশঙ্কা।

চিকিৎসকদের বক্তব্য, ধীরে ধীরে পারদের পতন হলে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেকটা সহজ হয়। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা অনেকখানি কমলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যুদ্ধক্ষেত্রে নিরস্ত্র সৈনিকের মতো হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে সর্দি, কাশি, বুকে কফ জমার সমস্যা বেশি ভোগায় প্রবীণ এবং শিশুদের। আগাম সতর্কতা না নিলে ক্রিসমাস এবং নতুন বছর উদযাপনের আনন্দ মাটি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

Advertisement

প্রতি শীতেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগেন দমদমের বাসিন্দা সত্তর বছরের দীপাঞ্জন রায়। তপসিয়ার বাসিন্দা বছর দশেকের শিশু মহম্মদ আক্রমের আবার হাঁপানির সমস্যা। শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভোগেন বেসরকারি চাকুরে বালিগঞ্জের অর্পিতা সমাদ্দার। চিকিৎসকদের মতে, দীপাঞ্জনবাবু, আক্রম, অর্পিতার মতোই হঠাৎ ঠান্ডায় যাঁদের সমস্যা হয়, তাঁরা সতর্ক থেকে নিজেদের মানিয়ে তুলুন কম তাপমাত্রার সঙ্গে।

আনন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর জানান, তাপমাত্রার তারতম্যে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ে। যার ফলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ় (সিওপিডি), হাঁপানির রোগী ও ফুসফুসের অসুখে আক্রান্তেরা সমস্যায় পড়েন। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে সকাল বা সন্ধ্যায় হাঁটতে না বেরোনোই ভাল। বরং দুপুরে হাঁটুন। ওই সময়ে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ যেহেতু গরম থাকে, বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা তুলনায় কম হয়।’’ বেরোতেই হলে রক্ষাকবচ হিসেবে মুখোশ পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ঘরের টবে গাছ লাগানোও উপকারী বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

সাবধানতা

রোগভোগ

• ফুসফুসের অসুখ, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, শুষ্ক ত্বক এবং অ্যালার্জির সমস্যা

মেনে চলুন

• সিওপিডি, ফুসফুসের অসুখ থাকলে প্রাতর্ভ্রমণে ও সন্ধ্যায় বেরোবেন না
• দরকারে মুখোশ পরুন
• দস্তানা, মোজা, টুপি পরুন। শিশুদের যথেষ্ট গরম জামা পরান
• বাতাস পরিশোধনকারী গাছ লাগান ঘরের টবে

মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক অভিরাল রায়ের কথায়, ‘‘তাপমাত্রার হঠাৎ পতনে বাতাসে ভাসমান ভাইরাস সক্রিয় হয়। তখন শরীরে সর্দি-কাশি বাসা বাঁধতে সময় লাগে না। ফুসফুসের অসুখ যাঁদের রয়েছে, তাঁদের বিশেষ করে সাবধান থাকা উচিত।’’ পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের পরামর্শ, ‘‘শিশুদের যথেষ্ট গরম জামাকাপড় পরিয়ে রাখা জরুরি।’’

যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ত্বকেরও। বেসরকারি হাসপাতালের চর্মরোগের চিকিৎসক রাজীব মালাকার জানান, শীতে ত্বক অত্যধিক শুকনো হয়ে যায়। কারও কারও ঠান্ডা থেকে অ্যালার্জি হয়। হাত-পায়ের আঙুল ফুলে ঘটে বিপত্তি। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘শুষ্ক ত্বক ফেটে এবং চুলকানি থেকে সংক্রমণ হতে পারে। নারকেল তেলের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে মাখুন। ময়শ্চরাইজারের কাজ করবে। ঠান্ডা বাতাস, মেঝে, জল এড়িয়ে চলুন। হাত-পা যতটা সম্ভব উষ্ণ রাখুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement