—প্রতীকী ছবি।
মাটিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত তরুণীকে টেনে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আর এক তরুণী। বলছেন, ‘‘ওঠো ওঠো, কিচ্ছু হয়নি।’’ যিনি বলছেন, তাঁর নিজেরই অবশ্য দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, রক্তাক্ত তরুণীর দেহে কোনও সাড় নেই। তদন্তে জানা যায়, যিনি এতক্ষণ তাঁকে তোলার চেষ্টা করছিলেন, তিনিই গাড়ি চালিয়ে তরুণীকে ধাক্কা মেরেছেন। ঘটনাটি ঘটেছিল দিল্লি আর গুরুগ্রামের মধ্যে।
গত নভেম্বরেই কলকাতার বাইপাসে এক মহিলা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে পিষে দেন এক ব্যক্তিকে। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার ওই মহিলা রাতের পার্টি সেরে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। যাঁকে তিনি ধাক্কা মারেন, সেই ব্যক্তির ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আগামী মার্চে।
পুলিশ দাবি করছে, মত্ত চালকদের ধরতে বছরভর তাঁদের কড়া নজরদারি থাকে। সব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত চালকদের হাজতবাসও হয়। কিন্তু বাস্তব বলছে, সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয় দুর্ঘটনার পরে। তার আগে পর্যন্ত মত্ত চালকদের ধরতে পুলিশের হাতিয়ার মোটরযান আইনের ১৮৫ নম্বর ধারা। যা জামিন-যোগ্য! সেই ধারা অনুযায়ী, মত্ত চালকদের দু’হাজার টাকা জরিমানা আর তিন মাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড করতে পারে পুলিশ। কিন্তু জামিন-যোগ্য হওয়ায় চালকেরা লাইসেন্সের নথি পুলিশে জমা করে এবং জরিমানা দিয়ে নিশ্চিন্তে ছাড় পেয়ে যান। এই অবস্থায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরাও বলছেন, ‘‘জরিমানার বদলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা গেলে অবস্থাটা কিছুটা বদলাত। ওটা আগে দরকার।’’
পুলিশের আরও দাবি, রাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। কোনও চালকের রক্তে ৩০ মিলিলিটার অ্যালকোহল মিললেই তাঁকে মত্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। উৎসবের মরসুমে পুলিশের এহেন ধরপাক়ড় বাড়ে। বড়দিনের রাতেও কলকাতা পুলিশ এলাকায় অন্তত দেড়শো জন গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। যদিও মোটরযান আইনের ১৮৫ নম্বর ধারায় তাঁদের প্রত্যেকে জামিন পেয়ে গিয়েছেন রাতারাতি।
মত্ত চালকের গা়ড়ির ধাক্কায় ভুক্তভোগীরা তাই বলছেন, ‘‘শাস্তি যদি এমন হয়, যে কেউই তো রাস্তায় নেমে দাপিয়ে বেড়াবেন।’’ ইএম বাইপাসে গাড়ির ধাক্কায় যিনি মারা গিয়েছিলেন, সেই হরিমোহন রামের সহকর্মী লালবাবু রামের কথায়, ‘‘আসলে সাজাই তো নরম। তাই কোনও ভয়ই কাজ করছে না গাড়ির চালকদের।’’
প্রশ্ন আরও আছে। কলকাতায় মত্ত চালকেরা ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে তাঁদের গাড়ি-সমেত ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফিরতে দেওয়াই বা কতটা নিরাপদ? এমন একাধিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মিতেশ জৈনের কাছে। তবে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেস করার সময়ে গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা উচিত। অথবা বলা উচিত, অন্য চালকের ব্যবস্থা করতে পারলে তবেই গাড়ি ছাড়া হবে।’’
তা হলে এ কথা বলা হয় না কেন? উত্তর নেই কারও কাছে।