অসমান: রাস্তার থেকে নিচু হয়ে রয়েছে ম্যানহোল। আশপাশ ভাঙাচোরা। বুধবার, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ঢাকনা খোলা থাকলে তো কথাই নেই, ঢাকনা বন্ধ থাকা অবস্থাতেও শহরের বড় বিপদের নাম ম্যানহোল! গত কয়েক মাসের পথ-দুর্ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে এমনই মত পুলিশের একাংশের। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোথাও মসৃণ রাস্তার মাঝে এমন ম্যানহোল রয়ে যাচ্ছে গর্তের মতো। কোথাও আবার উঁচু হয়ে তা বিপদ বাড়াচ্ছে গাড়ি বা বাইকচালকদের। মৃত্যুও ঘটছে যখন-তখন। পর পর এমন দুর্ঘটনার জেরে এ নিয়ে সতর্ক হয়ে কলকাতা পুরসভাকেও চিঠি দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্ধ ম্যানহোলের কারণে পথ-দুর্ঘটনার অভিযোগ কয়েক মাসে সব চেয়ে বেশি এসেছে দক্ষিণ কলকাতা থেকে। তার মধ্যে দু’টি ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিপদে পড়েছেন মোটরবাইক বা স্কুটারের চালকেরা। ম্যানহোল-গর্তে চাকা পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কাও লেগেছে।
বুধবার ঘুরে দেখা গেল, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একাংশের। মসৃণ রাস্তার মাঝে ম্যানহোল এমন ভাবে গর্তের মতো জেগে রয়েছে যে, সন্ধ্যায় তা বোঝা যায় না বলে অভিযোগ। দিনের বেলাতেও তাতে চাকা পড়ায় কোনওক্রমে বাঁচলেন এক বাইকচালক। কাছেই এক চায়ের দোকানের মালিক বললেন, ‘‘এ ভাবে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যেই রাস্তা সারাইয়ের নামে পিচ দেওয়া হয়। বার বার পিচের আস্তরণ দেওয়ায় রাস্তা উঁচু হয়ে যায়। কিন্তু ম্যানহোল থাকে আগের মতোই। ম্যানহোলের মুখ ছেড়ে যে হেতু পিচ করা হয়, তাই রাস্তার উচ্চতার সঙ্গে ম্যানহোলের মুখের উচ্চতা সমান হয় না।’’
একই চিত্র দেখা গেল জেমস লং সরণিতে। রাস্তার উচ্চতা থেকে কয়েকটি ম্যানহোল অন্তত ছ’-আট ইঞ্চি নীচে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘দিন দুয়েক আগেই ওই গর্তে চাকা পড়ায় এক বাইকচালক এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারান যে, পিছনে বসা যাত্রী ছিটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়েন। হেলমেট থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন।’’ রাসবিহারী কানেক্টর এবং এ জে সি বসু রোডের পরিস্থিতিও খুব আলাদা নয়। সেখানকার এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘বর্ষা এলে অবস্থা আরও খারাপ হয়। জলে ডোবা ম্যানহোলের মুখ আর রাস্তার ফারাক করা যায় না।’’
বিবেকানন্দ রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতার একাধিক রাস্তায় আবার দেখা গেল, রাস্তা থেকে উঁচু হয়ে রয়েছে ম্যানহোলের মুখ। সুকিয়া স্ট্রিট ও বিডন স্ট্রিটের কিছু জায়গাতেও একাধিক ম্যানহোলের মুখ উঁচু হয়ে রয়েছে। কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বৃষ্টির জল বার করতে এগুলো মাঝেমধ্যে খোলা হয়। তাই এখানে রাস্তা নিচু। মাঝরাস্তায় এমন উঁচু হয়ে থাকা ম্যানহোলের মুখ আরও বড় বিপদ।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এমনও হয়েছে, জল নামানোর পরে কোনওমতে ম্যানহোলের মুখ এঁটে দেওয়া হয়েছে। তাতে মোটরবাইকের চাকা পড়ে ঢাকনা সরে গিয়েছে! বাইক-আরোহী রক্ষা পেলেও গাড়ি চলাচল বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে।’’
কিন্তু পথ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী তো রাস্তার সঙ্গে সমান উচ্চতায় ম্যানহোলের মুখ থাকার কথা? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এগুলো সাধারণত বরো কমিটিরই দেখার কথা। কেন হয়নি, তা নিয়ে খোঁজ নেব। সমস্যা ধরে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছি।’’ পুরকর্তাদের একাংশ যদিও জানাচ্ছেন, রাস্তায় পিচ করে মেরামত করার চেয়ে ম্যানহোলের মুখ উঁচু করা খরচসাপেক্ষ। তাই ভাঙা রাস্তায় পিচ দিয়ে মেরামতি হয়। রাস্তার উচ্চতা বাড়ে। কিন্তু, আগের অবস্থাতেই থেকে যায় ম্যানহোলের মুখ।