আঁধার-পথে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র
রাত ন’টা। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দুর্গানগর সেতু পেরোতেই দেখা গেল, তীব্র গতিতে চলে গেল একটি মোটরবাইক। বাইকে সওয়ার দু’জন তরুণ-তরুণী। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরও একটি বাইক। অন্ধকার এক্সপ্রেসওয়ের বুক চিরে ওই দুই বাইকের গতি অন্য বাইকের থেকে অনেক বেশি। পুলিশের এক টহলরত অফিসার জানালেন, মোটরবাইক দু’টো রেস করছে। ওই অফিসারের দাবি, বারবার সচেতন করা সত্ত্বেও বাইক-রেস বেড়ে চলেছে। কিন্তু স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ, কোথায় সচেতনতা? পুলিশ ধরার আগেই বাইক আরোহীরা পগার পার।
অভিযোগ, রাত হলেই এক্সপ্রেসওয়েতে শুরু হয় মোটরবাইক রেস। লেন ভেঙে তীব্র গতিতে অন্য লেনেও গাড়ি চলে আসে। কেন রাত হলে বাড়ে গাড়ির বেপরোয়া চলাচল? পুলিশের নিয়ন্ত্রণই বা কোথায়?
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এখন এক্সপ্রেসওয়ের ৯ কিলোমিটার রাস্তা ভাল হয়ে যাওয়ায় পোয়াবারো হয়েছে বাইক ও অন্য গাড়ির। অভিযোগ, এক দিকে টহলদারিতে পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাব ও অন্য দিকে রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় আলো না থাকায় বহু সময়ে তীব্র গতি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত এক মাসে দু’টি বাইক-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই তরুণী। প্রচণ্ড গতিতে চলতে থাকা ওই মোটরবাইক অন্ধকারে ধাক্কা মারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, দিনের পর দিন এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা অন্ধকার থাকছে কেন?
অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ের আলো জ্বালানোর দায়িত্ব কার, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে স্থানীয় পুরসভা ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে। সংস্থার এক কর্তা জানিয়ে দিয়েছেন, রাস্তা তৈরি করা পর্যন্ত দায়িত্ব তাঁদের ছিল। কিন্তু এখন এই এক্সপ্রেসওয়ে যে যে পুরসভা এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সেই পুরসভার দায়িত্ব আলো জ্বালানোর। যদিও এই দাবি মানতে রাজি নন উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “যশোহর রোডের ধারে আমরা উচ্চ বাতিস্তম্ভ লাগিয়েছি। এমনকী, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের যে অংশ আমাদের পুরসভা এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেখানেও আমরা আলো লাগিয়েছি। তবে রাস্তায় আলো লাগানোর দায়িত্ব কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষেরই।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই টানাপড়েনে ভুগছেন গাড়িচালক ও পথচারীরা। এক বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, “অন্ধকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে ট্রাকগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। তীব্র গতিতে আসা মোটরবাইক বা গাড়ি যখন সেগুলো দেখতে পায়, তখন আর নিয়ন্ত্রণ করার সময় থাকে না।”
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যারাকপুর ও বিধাননগর— এই দুই কমিশনারেটের আওতায় পড়ে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের মধ্যে রয়েছে বরাহনগর, নিমতা, দমদম থানা। অন্য দিকে, বিধাননগর কমিশনারেটের মধ্যে পড়ে এয়ারপোর্ট থানা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনা ঘটলে কোন থানা তদন্ত করবে, তা নিয়েও চলে চাপান-উতোর। এই টানাপড়েনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায়। যদিও বিধাননগরের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “এমন অভিযোগ ঠিক নয়। দুর্ঘটনা ঘটলে আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দুই কমিশনারেটের সঙ্গেই সমন্বয় সাধন করে কাজ হয়।”