Behala Road Accident

‘ওর বাবা কেন আরও ভাল করে সোনাইয়ের হাত ধরে রাস্তা পার হল না?’ প্রশ্ন সৌরনীলের মায়ের

শুক্রবার বিকেলে সৌরনীলের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দেহ নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করা হয় হরিদেবপুর এলাকার একটি জায়গায়। তার পরে আর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়নি দীপিকাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৭:২৩
Share:
An image of the boy and his mother

দুর্ঘটনায় মৃত সৌরনীলের (ডান দিকে) স্কুলব্যাগ আঁকড়ে মা। শুক্রবার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে। ছবি: সংগৃহীত।

কখনও ছেলের বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। কখনও তার খেলার টেডি বিয়ার দরজার বাইরে ছুড়ে ফেলছেন। মাঝেমধ্যেই বলে উঠছেন, ‘‘ওর বাবা কেন সোনাইকে (ছেলেকে দেওয়া তাঁর নাম) আরও ভাল করে হাতটা ধরে নিয়ে রাস্তা পার হল না!’’ পরিবারের কেউ তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলে বলে উঠছেন, ‘‘ওর বাবা তো বেঁচে গেল। সতর্ক হলে অন্তত ছেলেটার প্রাণটাও বেঁচে যেত।’’

বেহালায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত আট বছরের সৌরনীল সরকারের মা দীপিকার এখন এমনই অবস্থা বলে তাঁর পরিবার সূত্রের খবর। শুক্রবার বিকেলে সৌরনীলের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দেহ নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করা হয় হরিদেবপুর এলাকার একটি জায়গায়। তার পরে আর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়নি দীপিকাকে। সৌরনীলদের বাড়িতে গেলে শনিবার দেখা যায়, তাদের তেতলার ঘর তালাবন্ধ। ভাড়াটেরা জানান, রাত থেকেই ওঁরা নেই। মাঝেমধ্যে পাড়ার লোকজন এসে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন। সৌরনীলের বাবার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও খবর আসছে মাঝেমধ্যে। তা ঘিরে যেন উৎকণ্ঠা কাটছে না প্রতিবেশীদের।

তাঁরাই জানাচ্ছেন, আপাতত দীপিকাকে তাঁর দাদা সঞ্জীব সরকারের দমদমের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। সর্বক্ষণ শুধু ছেলে সোনাইয়ের কথাই তাঁর মুখে। রাতভর ঘুম না আসার পরে সকালের দিকে চোখ একটু লেগে এসেছিল দীপিকার। পরিবার সূত্রের খবর, তার মধ্যেই জেগে উঠে বলেছেন, ‘‘সোনাই ডাকছে। বেঁচে থেকে আর কী হবে!’’ দীপিকার পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘কিছুতেই যেন ও মানতে পারছে না যে, বাবার হাত থেকে ছেলেটার সঙ্গে এ রকম ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলে যাওয়ার পথে অটো থেকে নেমে ছেলেকে নিয়ে রাস্তার বাঁ দিক ধরে হাঁটছিলেন না সৌরনীলের বাবা সরোজকুমার সরকার। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, চৌরাস্তা মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে অটো থেকে নেমেই তিনি ছেলের হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে যান। এর পরে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে পার হওয়ার সিগন্যাল খোলা রয়েছে দেখেই এগোতে শুরু করেন। সেই সময়ে একটি লরির পিছনে আর একটি লরি দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলের হাত ধরে দ্বিতীয় লরির সামনে দিয়ে রাস্তা পেরোতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। সেটি পিষে দিয়ে চলে যায় সৌরনীলকে। সরোজকুমারের পায়ের উপর দিয়েও লরির চাকা চলে যায়। এই ঘটনাটাই শুনে ফেলেছেন দীপিকা। তার পর থেকেই তাঁর মনে অসাবধানতার বিষয়টি দাগ কেটেছে।

সৌরনীলের মামা সঞ্জীব যদিও এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘আপাতত আমরা এ নিয়ে ভাবছি না। বাচ্চাটা আর ফিরবে না। ক্ষতিপূরণ চাই না। তবে এমন ঘটনা যাতে আর কারও ক্ষেত্রে না ঘটে, সেটা পুলিশ নিশ্চিত করুক।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পুলিশ কেন যেমন খুশি রাস্তা পার হওয়া আটকাতে পারে না? ডায়মন্ড হারবার রোডের বেশির ভাগ জায়গায় এমন ভাবে ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে যে, রাস্তায় নেমে হাঁটা ছাড়া উপায় থাকে না। সৌরনীলের বাবার সঙ্গে আমার আর কথা হয়নি। হলে আসল বিষয়টা জানতে পারব।’’ সরোজকুমার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর বাঁ পায়ের হাড় ভেঙেছে। আগামী মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার হতে পারে।

কিছু দিন আগেই ডিউটিতে যাওয়ার পথে ডায়মন্ড হারবার রোডে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশকর্মী শিশির মণ্ডলের। তাঁর স্ত্রী বিউটি এ দিন বললেন, ‘‘ওই পরিবারের উপর দিয়ে কী যাচ্ছে, আমি বুঝি। একটা ফুটফুটে শিশু। ওর বাবা-মায়ের শক্ত থাকা অসম্ভব। কিন্তু কোনও মৃত্যুর পরেই কিছু বদলায় না। আমার স্বামীর মৃত্যু দিয়ে সেটা বুঝেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন