কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
সপ্তাহ দুয়েক আগে রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকায় কলকাতা পুরসভার একটি পরিত্যক্ত পাম্প হাউস ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। সেই ঘটনার পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দিয়েছিলেন, শহরের বুকে থাকা পরিত্যক্ত পাম্প হাউস-সহ পুরসভার আওতাধীন বিপজ্জনক বাড়িগুলি খুঁজে বার করে ভেঙে ফেলতে হবে। সেই মতো পুরসভার বিভিন্ন বিভাগ তাদের আওতাধীন বিপজ্জনক বাড়ি খোঁজার কাজ শেষ করেছে। আর তাতেই উঠে এসেছে, খাস পুরসভার মালিকানাধীন ১০০টিরও বেশি বাড়ি বিপজ্জনক!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শহরে সরকারি নয়, এমন বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। সেগুলি নিয়ে এমনিতেই পুরসভার মাথাব্যথার অন্ত নেই। এর উপরে তাদের মালিকানাধীন এত বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়রের নির্দেশের পরেই ওই সমস্ত বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করতে ‘আদাজল খেয়ে’ নামছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, কী প্রক্রিয়ায় ওই বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা হবে, তা নিয়ে শনিবার বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশেষ পুর কমিশনার সোমনাথ দে।
ওই বৈঠকে উঠে এসেছে, পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের আওতায় বিপজ্জনক ঘর
রয়েছে ৮০টি। সব ক’টি ঘরই বিভিন্ন জলাধার লাগোয়া। বৈঠকে জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি জানান, ওই ৮০টি ছোট ঘর যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। সেগুলি মূলত পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের কর্মীরা ডিউটির সময়ে ব্যবহার করেন। পুরসভা সূত্রের খবর, বিল্ডিং বিভাগ শীঘ্রই ওই ঘরগুলি ভাঙার কাজ শুরু করবে। কাজ শেষে যাবতীয় বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য রাজারহাটের প্লান্টে ফেলে আসবে পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। একই ভাবে, পুরসভার ডিজি (সিভিল)-এর তরফে ওই বৈঠকে জানানো হয়েছে, শহরের এক ও তিন নম্বর বরো এলাকায় দু’টি কর্মী আবাসন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ওই আবাসন দু’টি ভাঙার কাজ শুরু করবে। সেই বর্জ্যও নিয়ে যাওয়া হবে রাজারহাটের প্লান্টে।
পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুরসভা পরিচালিত একাধিক কর্মী আবাসনে দিনের পর দিন
বেআইনি ভাবে বসবাস করছেন প্রচুর বহিরাগত। মূলত তাঁরাই থাকছেন ওই সব বিপজ্জনক আবাসনে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা রবিবার বলেন, ‘‘শীঘ্রই ওই সব আবাসন খালি করতে নোটিস দেবে পুর প্রশাসন। বহিরাগতেরা না সরলে পুলিশ দিয়ে ঘর খালি করানো হবে।’’
তবে পুরসভার অধীনে এত বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকায় তাদের কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘‘বর্ষা শেষ হতে চলেছে। আর এখন পুর কর্তৃপক্ষের মনে পড়ল যে, তাদের পরিচালনায় থাকা একশোটিরও বেশি বাড়ি বিপজ্জনক? এ তো বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে বাজনা বাজাতে নামা। আসলে এ সব লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।’’