জমা জলে জাল দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত খুদেরা। বৃহস্পতিবার, বেহালার শীলপাড়ার বিদ্যাসাগর কলোনিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বৃষ্টি নামায় গরম থেকে মুক্তি পেয়ে শহরবাসী যতটা খুশি, বেহালার বাসিন্দারা ঠিক ততটাই আতঙ্কে। আতঙ্কের কারণ, বর্ষা শুরু হতেই কলকাতা পুরসভার ১২৩ ও ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরে এসেছে জল-যন্ত্রণার সেই চেনা ছবি।
বেহালার ১২৩ ও ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শীলপাড়া, বিদ্যাসাগরপল্লি, বৈশালী পার্ক, ঢালিপাড়া, গোপাল কলোনি, মতিলাল গুপ্ত রোড, ঠাকুরতলা রোডের বিস্তীর্ণ এলাকায় বৃষ্টি থেমে যাওয়ার প্রায় দু’দিন পরেও দেখা গেল, বহু বাসিন্দাই জলবন্দি। গলির জলে খেলছে মাছ। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর প্রশ্ন, ‘‘বর্ষার শুরুতেই এই অবস্থা? বাকি মরসুম কাটবে কী ভাবে?’’ তাঁদের দাবি, খুব বেশি বৃষ্টি না হতেই জল জমার কারণ, অপরিকল্পিত নিকাশির কাজ। আবার পুরসভার দাবি, এলাকার উন্নয়নে ‘কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ (কেইআইআইপি)-এর অধীনে কাজ হচ্ছে। ভূগর্ভে নিকাশির বড় পাইপ বসছে। তাই সাময়িক ভোগান্তি। এতে অবশ্য ভুলছেন না এলাকাবাসী। কারণ, কেইআইআইপি-র অধীনে নিকাশির কাজের পরেও শহরের বহু জায়গায় জল জমার খবর পান তাঁরা।
একটানা বৃষ্টি থেমেছে বুধবার সকাল ১০টায়। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তার পরেও জল বাড়তে থাকল কেন? তাঁদের দাবি, এর কারণ আশপাশের এলাকার জলও তাঁদের ওয়ার্ডে এসে পড়ছে। এলাকার বাসিন্দা তথা শিক্ষক শৌভিক দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, জায়গাটা আগে এ রকম ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরপল্লির গা ঘেঁষে গিয়েছে একটি খাল। ৩০-৪০ ফুট চওড়া এবং ১৫ ফুট গভীর ওই খালে জমা জল পড়ত। তখন জল জমতই না। সেই খালই বন্ধ করে রাস্তা বানিয়ে নীচে নিকাশির পাইপ বসাচ্ছে কেইআইআইপি। ওই খাল যতটা চওড়া ছিল, নিকাশির পাইপ সম্ভবত ততটা চওড়া নয়। তা ছাড়া, গত দু’বছরেও কাজ শেষ হয়নি।’’
পুরনো বাসিন্দা সনৎকুমার দত্ত বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরে বাড়ির সিঁড়ি পর্যন্ত জল জমে আছে। মেয়রকে ইমেল করেছি। পুরসভার ভিজিল্যান্স সেলে জানিয়েছি। মেয়র অন কলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ করেও সাড়া পাইনি।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় জল জমে রয়েছে, কিন্তু পুরপ্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সুদীপ পোল্লের দাবি, ‘‘নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কেইআইআইপি-র কাজ শেষ না হওয়ায় জল জমছে।’’ ওই দুই ওয়ার্ডের খারাপ অবস্থার কথা মানছেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহও। তিনি বলেন, ‘‘সব থেকে খারাপ অবস্থা ১২৩ এবং ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। কেইআইআইপি এখনও মূল পাইপের সঙ্গে আশপাশের নিকাশি নালার পাইপের সংযোগ দেওয়া শেষ করেনি। কাজ যেখানে যেখানে শেষ হয়নি, সেখানেই সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। সংস্থার কর্তাদের ডেকে দ্রুত নিকাশির কাজ শেষ করতে বলেছি।’’
বাসিন্দা সুমন্ত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বহু বছর এখানে আছি। এমনটা হচ্ছে দু’বছর ধরে। আর এখন যা অবস্থা, বলাই যায়, উন্নয়নের জোয়ারে নদী এসেছে দুয়ারে।’’