—প্রতীকী চিত্র।
আচমকাই ধুম জ্বর। পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল ডেঙ্গি। দিন পাঁচেক পরে জ্বর কমতে বছর ত্রিশের যুবক ভেবেছিলেন, তিনি সুস্থ। কিন্তু, তিন দিনের মাথায় হঠাৎই শুরু হয় খিঁচুনি। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গিতে এমন উপসর্গগুলি ভাল করে বুঝতে হবে। কারণ, জ্বর কমার অর্থ রোগী সুস্থ নন। বরং, জ্বর কমলেও পরের ৫-৭ দিন আরও সতর্ক থাকতে হবে। বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী, রাজ্যে জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি-মৃত্যুর সংখ্যা ২০। চিকিৎসকদের মতে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই জ্বর কমলেও সঙ্কটজনক অবস্থার লক্ষণগুলি প্রথমেই বোঝেননি কেউ। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেরি হওয়ায় অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে বিপদ ঘটেছে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘খুব ছোট এবং বয়স্কদের ডেঙ্গিতে ঝুঁকি বেশি। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, কোমর্বিডিটিও থাকে। ডেঙ্গি আক্রান্তের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বর কমার পরের সময়টা। একেই ‘ক্রিটিক্যাল’ পর্ব বলা হয়।’’ তিনি আরও জানান, জ্বর আসার প্রথম চার দিন পর্যন্ত এনএস-১ অ্যান্টিজেন এবং চার দিনের পর থেকে আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করলে তবেই ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তখন বাড়িতে পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে রোগীকে। খেতে হবে প্রচুর জল, পুষ্টিকর খাবার। চিকিৎসকদের মতে, জ্বরে জল খাওয়া এড়ালে বিপদ বাড়বে।
চিকিৎসকেরা আরও জানান, ডেঙ্গির জ্বরের প্রথম ২-৫ দিন পর্যন্ত সময় হল ‘ফেব্রাইল ফেজ়’। তখন জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, হাড়ের সংযোগস্থলে, মাংসপেশী বা গা-হাত-পায়ে ব্যথা, শরীরে র্যাশ বেরোনোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। জ্বর কমার পরের ২-৭ দিনকে বলে ‘ক্রিটিক্যাল ফেজ়’— এতে ক্যাপিলারি লিকেজ অর্থাৎ রক্তবাহী নালি থেকে জল বেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হয়। তখন শরীর জলশূন্য হয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারেন। ডেঙ্গিতে ‘হেমারেজিক ফিভার’ অর্থাৎ প্লেটলেট কমতে শুরু করা ও রক্তক্ষরণ হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানান, প্লেটলেট কমার ঘটনা স্বাভাবিক হলেও তা ১০ হাজারের নীচে নামলে, বা তার বেশি থাকাকালীনও শরীরের কোনও অংশে রক্তক্ষরণ হলে অবিলম্বে প্লেটলেট দিতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘জ্বর কমার পরে অতি সঙ্কটজনক পরিস্থিতি শুরু হয়। তখন প্রতিদিন প্লেটলেট ও পিসিভি বা হিমাটোক্রিট পরীক্ষা জরুরি।’’ তাঁর পরামর্শ, জ্বর কমলেও আরও ৪-৫ দিন বিশ্রামে ও সতর্ক থাকতে হবে। ডাক্তারেরা জানান, জ্বর কমার পরে রক্তচাপ নেমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, পেটে জল জমার মতো সমস্যা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই তড়িঘড়ি রোগীকে হাসপাতালে আনা প্রয়োজন। এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, ‘‘প্লেটলেট ২০ হাজারের নীচে নামলে ও ম্যাক্রোফেজ় অ্যাক্টিভেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে সাইটোকাইন ঝড়ের কারণে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হচ্ছে। এর জন্য ডেঙ্গি রোগীরা ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি হন।’’ তাই লক্ষণ বুঝে রোগীকে হাসপাতালে আনার পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।