School Teacher

School Teacher: ছুটি কমিয়ে দ্রুত খোলা হোক স্কুল, পথে শিক্ষকেরা

সরকারি স্কুলের বহু পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। প্রাথমিকের অনেক পড়ুয়া তাদের শিক্ষকদের নাম ভুলে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ০৭:১১
Share:

স্কুল খোলার দাবিতে ধর্নায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার, কলেজ স্কোয়ারে। নিজস্ব চিত্র

বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শহরের পথে সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ বা ধর্না কম হয়নি। কিন্তু পড়ুয়াদের স্বার্থে ছুটি কমিয়ে স্কুল খোলার দাবিতে অবস্থান? বৃহস্পতিবার এমনই দেখা গেল কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তির কাছে।

Advertisement

গরমের তীব্রতা এখন অনেক কম। তাই দীর্ঘ দেড় মাস ছুটি দরকার নেই। এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদেরই। দ্রুত খোলা হোক স্কুল। এমনই দাবিতে এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হন বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা।

শিক্ষকদের বুকে ঝোলানো ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘আর ছুটি নয়। এ বার পড়াতে চাই।’ কোনও শিক্ষক আবার তুলে ধরেছেন পোস্টার। তাতে লেখা, ‘করোনার জন্য দু’বছর ছুটির পরে ফের ৪৫ দিনের ছুটি পড়ুয়াদের পাঠাভ্যাস নষ্ট করবে।’ এক শিক্ষকের কথায়, “রাস্তাঘাটে আমাদের বিদ্রুপ করছেন লোকজন। অনেকেই বলছেন, আমরা বাড়িতে বসে বেতন নিচ্ছি। এ তো দুয়ারে বেতন। কিন্তু ওঁদের বোঝাতে পারছি না, আমরা এই দীর্ঘ ছুটি চাই না। স্কুলে গিয়ে পড়াতে চাই। কারণ, এখন গরম অনেক কম।’’

Advertisement

এ দিন কলেজ স্কোয়ারে ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির’ তরফে এই ধর্না-অবস্থান চলে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। অংশ নেন প্রায় শ’দেড়েক শিক্ষক-শিক্ষিকা। অবস্থানরত শিক্ষকদের মতে, এপ্রিলে বেশ কিছু দিন তাপপ্রবাহ চলেছিল সে কথা ঠিক। সে জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু গরমে কী করা যায়, তা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, তাপমাত্রা কমলে পরিস্থিতি বুঝে গরমের ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে করোনাকালে দীর্ঘ দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার জন্য পড়াশোনার ক্ষতির দিকটিও বিবেচনা করা হবে। কিন্তু শিক্ষকদের অভিযোগ, সেই সব বিবেচনা না করেই আচমকা দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।

‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির’ সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা জানান, স্কুল খোলার দাবিতে তাঁরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আবারও স্মারকলিপি দেবেন। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পথে নামায় কি শাস্তির ভয় নেই তাঁদের? আনন্দবাবু বলেন, “এর আগেও ন্যায্য দাবি তুলে কারণ দর্শানোর চিঠি পেয়েছি। এ বারও তা পেলে পাব। কিন্তু পড়ুয়াদের স্বার্থে এই আন্দোলন থেকে কিছুতেই পিছু হটব না।’’

শিক্ষকদের একাংশের মতে, করোনার জন্য দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এমনিতেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আবার নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে। সরকারি স্কুলের বহু পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। প্রাথমিকের অনেক পড়ুয়া তাদের শিক্ষকদের নাম ভুলে গিয়েছিল। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক যখন সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, সেই সময়েই গরমের জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হল। শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকারের মতে, “আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে সিদ্ধান্ত বদল করলে পড়ুয়ারাই উপকৃত হত। প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন ঠিক সময়ে না হলে পরের মূল্যায়ন নিতেও দেরি হয়ে যাবে।’’ এ দিনের ধর্নায় অংশ নেওয়া কয়েক জন শিক্ষক অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ছুটি দিয়ে আদতে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের পথেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাবু আরও জানান, দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ১৭ মে ফের অবস্থান-বিক্ষোভ করবেন। স্কুল খোলার দাবিতে শিক্ষকদের জমায়েত করতে চলেছে ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতিও’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, “দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ রেখে প্রান্তিক পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। স্কুল খোলার দাবিতে সমিতির আহ্বানে ১৩ মে করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডের কাছে শিক্ষকদের জমায়েত হবে।’’ সেই সঙ্গে স্কুলশিক্ষা কমিশনারকেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুকুমারবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement