ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক

রাস্তায় সব্জির পসরা, ভাতের হোটেল বড়ই বেমানান

ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক অঞ্চলে বসবাস করছি ২০ বছর ধরে। আমার বয়সের নিরিখে খুব বেশি দিন নয়। তবু এই জায়গাটাই এখন আপন হয়ে গিয়েছে। সেটা অবশ্য এই পাড়ার গুণেই।

Advertisement

তাপস রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০০:১৯
Share:

ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক অঞ্চলে বসবাস করছি ২০ বছর ধরে। আমার বয়সের নিরিখে খুব বেশি দিন নয়। তবু এই জায়গাটাই এখন আপন হয়ে গিয়েছে। সেটা অবশ্য এই পাড়ার গুণেই।

Advertisement

বাসিন্দারা খুব ভালবাসেন এই এলাকাটিকে। নিজেদের উদ্যোগেই গোটা এলাকাটাকে এক করে রাখেন তাঁরা। ট্রাম রাস্তা থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এইটুকু অঞ্চলের মধ্যেই তিন-তিনটি রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় থাকার অন্য সূত্রটি হল দু’টো পুজো। এক দিকে ‘বালিগঞ্জ কালচারাল’, অন্য দিকে ‘সমাজসেবী’। পুজোর সময়ে তাই গোটা পাড়াটাই জমজমাট হয়ে ওঠে।

আমাদের পাড়াটা দেখতেও খুব সুন্দর। বেশ সাজানো-গোছানো। গোটা এলাকাটাই গাছ-গাছালিতে ভরা। কলকাতা শহরে এ রকম অঞ্চল কমই রয়েছে, যেখানে এত গাছ। না হলে সর্বত্রই তো শুধু গাছ কেটে ফেলে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। এ পাড়াটা সে দিক দিয়ে একেবারেই অন্য রকম। আমাদের পাড়ায় ঢুকলেই যেন মনটা ভাল হয়ে যায়।
আসলে এলাকার বাসিন্দারা সকলেই নিজেদের পাড়ার খুব যত্ন নেন। দু’-একটা জায়গা ছাড়া কেউ ময়লা ফেলেন না রাস্তায়। তাই গোটা চত্বরটাই পরিষ্কার থাকে।

Advertisement

এই এলাকায় পুরসভার কাজেও আমরা খুব খুশি। কলকাতার অন্যান্য এলাকার কথা বলতে পারব না, কিন্তু এই জায়গাটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে পুরসভা। আগে এখানে ময়লা ফেলার জন্য ঠেলাগাড়ি আসত, এখন সব মোটরচালিত ভ্যান। পাড়ার চেহারার সঙ্গে সেটা আরও মানানসই হয়েছে। এখানকার কাউন্সিলরেরাও সব সময়ে এলাকার খেয়াল রেখেছেন। আগে বর্ষাকালে এখানে জল জমত। এখন আর সে সমস্যাও নেই। এলাকার আইনশৃঙ্খলার হালও ভাল। সে সংক্রান্ত বড়সড় অসুবিধের কথা মনেই আসে না। অনেক রাত পর্যন্ত এলাকার মহিলাদেরও দেখা যায় নিশ্চিন্তে রাস্তায় চলাফেরা করতে।

তবু কিছু অসুবিধে তো থেকেই যায়। যত বেশি ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে, ততই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটের বাসিন্দারই দু’টো করে গাড়ি। কিন্তু পার্কিং ব্যবস্থা তত নেই। ফলে অধিকাংশ রাস্তাই হয়ে উঠছে পার্কিংয়ের জায়গা। লেক রোডের মতো চওড়া রাস্তায় হয়তো ততটা সমস্যা নেই, কিন্তু যতীনদাস রোডের পশ্চিম দিকটা দিয়ে তো এখন যাতায়াত করাই মুশকিল হয়ে উঠছে। রাস্তার একটা দিক সারাক্ষণই ভরে থাকে গাড়িতে।

আরও একটা ব্যাপার মাঝেমাঝে খুব চোখে লাগে। ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের মতো একটা অভিজাত পাড়ার রাস্তায় বসে সব্জি বিক্রি একেবারেই মানায় না। কেমন জানি বেসুরো ঠেকে। রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন থেকে এর প্রতিরোধও করা হয়, তবু সমস্যা মেটেনি। এলাকাবাসীরা কেউ কেউ নিশ্চয়ই কেনেন এই সব্জি বিক্রেতাদের থেকে। না হলে আর বিক্রেতারা রোজ রোজ আসছেন কেন! বাসিন্দারা যদি একটু সচেতন হন, তা হলে এই সমস্যাটা আর বাড়বে না। নয় তো এক জনকে দেখেই আর এক জন বসবেন। এ ভাবে আরও বেড়ে যাবে বিষয়টি। যদি এই এলাকায় সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা রাখতেই হয়, তা হলে দক্ষিণ দিল্লির মতো ঠেলা দেওয়া যায় এই বিক্রেতাদের। দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে। রাস্তাও সাফ থাকবে। এলাকাটা বাজারের আকার নেওয়া থেকেও বাঁচবে। আমাদের বাড়ির সামনে কিছু ত্রিপল দেওয়া ভাতের হোটেলও রয়েছে। সেগুলোও আর বাড়তে দেখতে চাই না। কারণ ওইটুকু নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই পাড়াটা আরও সুন্দর দেখাবে।

লেখক বিশিষ্ট চিকিৎসক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement