শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না হলে তার প্রতিবাদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দিতে চান সুরঞ্জন দাস। বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনার রিপোর্ট দিয়ে এসেছেন তিনি। শুক্রবার সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমি শিক্ষামন্ত্রীকে সব জানিয়েছি। এও বলেছি যে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমি পদত্যাগ করব।’’
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কুটা’র আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় আহত হন শিক্ষক দিব্যেন্দু পাল। তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে হেনস্থা হন উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যও। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের চোখের সামনেই ঘটে যায় সব। কিন্তু ওই দিন সুরঞ্জনবাবু বিষয়টি নিয়ে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া দেননি। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দিয়ে তিনি মুখ খোলেন। গোটা অধ্যায়টিকে কলঙ্কজনক বলে বর্ণনা করেন। তার পরেই এ দিন তাঁর মুখে প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথাও শোনা গেল। অল্প ক’দিনের মধ্যেই সুরঞ্জনবাবুর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও অনিশ্চিত হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। সুরঞ্জনবাবু নিজেই বলেছেন, ‘‘যাদবপুরে যাব কি না, তা এখনও ঠিক করিনি।’’ বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, ২ জুলাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সুরঞ্জনবাবু। পরে ঠিক হয় তিনি ১৫ জুলাই নতুন পদে যোগ দেবেন। তা হলে এখন দ্বিধা কেন?
সুরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জায়গায় কে আসবেন, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। তার মধ্যে এই ডামাডোলের আবহে তিনি হুট করে ছেড়ে চলে যাবেন কী করে, এই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন উপাচার্য। তার উপরে তিনি যাদবপুরে যোগ দেওয়ার আগেই বুধবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাদবপুরের শিক্ষকদের একাংশ যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, সেটাও তাঁর দ্বিধা বাড়িয়েছে।
এখন যে সুরঞ্জনবাবু যাদবপুরে যাওয়ার ব্যাপারে দোটানায় রয়েছেন এবং তেমন হলে পদত্যাগের কথাও ভাবছেন, সে ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য কী? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘উনি আমাকে এমন কিছু জানাননি। ওঁর হয়তো অভিমান হয়েছে।’’
কিন্তু অভিযুক্তদের নাম এখনও উপাচার্য প্রকাশ্যে বলেননি, পুলিশের সাহায্যও নেননি। কেন?
সুরঞ্জনবাবুর যুক্তি, ‘‘আমার কাছে শিক্ষামন্ত্রী গোপন রিপোর্ট চেয়েছিলেন। রিপোর্টে সব বলা আছে।’’ বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা কিন্তু উদাহরণ পেশ করে বলছেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি যখন হামলা চালায়, সে সময় তৎকালীন উপাচার্য মালবিকা সরকার এবং রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত বহিরাগত হামলাকারীদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সুরঞ্জনবাবু তা করার সাহস দেখাতে পারেননি।’’