‘বলেছে মিছিলে এলে ভয় নেই, তাই এলাম’

কেউ ঢাক বাজাতে বাজাতে, কেউ বা শিঙা ফুঁকতে ফুঁকতেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। খোল-করতাল বাজাতে বাজাতে মিছিলে পা মিলিয়েছিল যুবক-প্রৌঢ়দের একটি দলও।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

শামিল: খোল-করতাল নিয়ে মিছিলে এসেছিলেন সুশীলা দাস। (ডান দিকে) শিঙা নিয়ে বিজেপির মিছিলে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নয়া নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে ডাকা মিছিলে তখন রীতিমতো গমগম করছে যোগাযোগ ভবনের সামনের রাস্তা। হঠাৎই কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে জটলায় এক যুবক বলে উঠলেন, ‘‘রোজ রোজ মিছিল। ভোগান্তির শেষ নেই। কেউ বলছে কাগজ না থাকলে নাম কাটা যাবে, কেউ আবার বলছে এই আইনে আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও রকম প্রশ্ন উঠবে না। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল— কে জানে?’’ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনের ধমকের চোটে অবশ্য সেই প্রশ্ন কারও কানে পৌঁছল কি না, জানা গেল না। কোনও রকমে চা খেয়ে সরে পড়লেন ওই ব্যক্তি।

Advertisement

তবে ওই যুবকের প্রশ্নগুলোই গত কয়েক দিন ধরে শহরবাসীর মুখে মুখে ঘুরছে। এর আগের কয়েক দিন নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পা মিলিয়েছিলেন সাধারণ নাগরিক থেকে রাজনৈতিক দলগুলি। এ দিন বিজেপির মিছিলে দেখা গেল উল্টো ছবি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ সেই মিছিলে এসেছিলেন নতুন আইনের সমর্থনে। অনেকে ভেবেছিলেন, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলবে। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, তেমন করে কিছুই স্পষ্ট হল না।

কেউ ঢাক বাজাতে বাজাতে, কেউ বা শিঙা ফুঁকতে ফুঁকতেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। খোল-করতাল বাজাতে বাজাতে মিছিলে পা মিলিয়েছিল যুবক-প্রৌঢ়দের একটি দলও। সেই দলে ছিলেন বর্ধমান থেকে আসা সুশীলা দাস। কাকভোরে উঠে সোজা কলকাতায় চলে এসেছেন। নতুন আইনটা সম্পর্কে শুনেছেন? প্রশ্ন শুনে কিছু ক্ষণ চুপ করে রইলেন প্রৌঢ়া। পরে বললেন, ‘‘অতশত জানি না। বলেছে মিছিলে এলে ভয় নেই। পাড়ার সকলে এল। তাই আমিও চলে এলাম।’’

Advertisement

কালনার সুশীলাদেবীই শুধু নন। কেষ্টপুরের রবি শর্মা, গরফার অস্মিতা মুখোপাধ্যায়, ক্যানিংয়ের সুভাষ মণ্ডল, নদিয়ার সুরজিৎ বিশ্বাস, ব্যারাকপুরের রাজকুমার অধিকারী থেকে শুরু করে বাগদার বলাই মজুমদারেরা নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কম-বেশি যা বললেন, তাতে ধোঁয়াশা খুব বেশি কাটল না।

এরই মধ্যে অনেকে নিজেদের মতো করে নতুন আইনের ব্যাখ্যা করলেন। যেমন মধ্যমগ্রামের শম্ভু বসাক। বললেন, ‘‘তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস এবং সংবাদমাধ্যম নতুন আইন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ধৈর্য ধরুন। এই আইন সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কেন্দ্র কিছু জানাবে।’’ আবার বনগাঁর রমেন দাসের কথায়, ‘‘বাপ-ঠাকুরদারা পঞ্চাশের দশকে এ দেশে এসেছিলেন। আমার জন্ম এখানেই। বিজেপি বলছে নতুন আইনে নাগরিকত্ব পাব। তাই সমর্থন জানাতে এসেছি।’’ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অবশ্য দাবি, এই আইনে কোনও বিভ্রান্তি থাকবে না।

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের আগে মঞ্চ থেকে নতুন নাগরিকত্ব আইন ব্যাখ্যা করছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আইন নিয়ে ওঠা নানা প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছিলেন। ওই পথ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা মানস বসুরায় বললেন, ‘‘সবার কথাই শুনছি। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি না, আগামী দিনে ঠিক কী ঘটতে চলেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement