রেললাইনে সেই নকল বোমা। বুধবার, বারাসতে। নিজস্ব চিত্র
বোমার মতো করে পাথরের গায়ে সুতো বাঁধা হয়েছিল। এক নজরে দেখলে মনে হতে বাধ্য যে বস্তুটি বোমা। তার পরে সেটি রেখে দেওয়া হয়েছিল লাইনের উপরে। তার জেরে বোমাতঙ্কের কারণে বুধবার অফিসের সময়ে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসতে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ রইল ট্রেন। রেল পুলিশ জানায়, ধর্মঘটীরাই ট্রেন আটকাতে ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ দিনের ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে রাস্তা আটকানো হয়। শিয়ালদহ-বনগাঁ ও শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় ট্রেন অবরোধ করা হয়। হৃদয়পুরে রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়া হয়। বিরাটি, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, হাড়োয়া রোড এলাকায় দফায় দফায় ট্রেন অবরোধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন লোকজন। বারাসতের বাসিন্দা সুদীপ দে বলেন, ‘‘ট্রেনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। ও দিকে রাস্তাও অবরোধ। অফিসে যাওয়ার একটি বাসও বাস পাচ্ছি না।’’ দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বারাসতের চাঁপাডালিতে পুলিশের সঙ্গে ধর্মঘটকারীদের ধস্তাধস্তি হতে দেখা যায়। অভিযোগ, মধ্যমগ্রামে ট্রাকের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। এক সময়ে তৃণমূলও ধর্মঘট বিরোধী মিছিল শুরু করে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মধ্যমগ্রাম স্টেশন রোড। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। দফায় দফায় বেড়াচাপা, কদম্বগাছিতে বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসতের কাছারি ময়দান পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্য দিকে উত্তর ২৪ পরগনারই বিধাননগর এলাকায় এ দিন ধর্মঘট তেমন ভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি বলেই দাবি করেছে সেখানকার প্রশাসন। যদিও সারা দিনই রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল কম। তার জেরে সল্টলেকে চাকরি করতে আসা লোকজনের সংখ্যাও সেখানে কম ছিল। যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা বিকেলের পর থেকে বাস ও অটোর সংখ্যা অনেকটাই কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন।
এ দিন সকালে নিউ টাউনের একটি হোটেলের কাছে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের দাবি, টায়ার পোড়ানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জন বাম নেতা-কর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের ছেলে বাম নেতা সপ্তর্ষি দেব। সকাল সাড়ে আটটা থেকে চিনার পার্ক, বাগুইআটি, কেষ্টপুরে বাম ও কংগ্রেসের তরফে মিছিল করা হয়। অবরোধের চেষ্টা করলে অবশ্য পুলিশ দ্রুত সরিয়ে দেয়।
পাঁচ নম্বর সেক্টর, নিউ টাউন শিল্পতালুকেও এ দিন লোকজনের তেমন ভিড় ছিল না। সেখানকার কর্মীরা জানান, অনেকে ভোরেই অফিসে পৌঁছে যান। অনেকে আবার বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ করেছেন। দত্তপুকুর থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মসূত্রে এসেছিলেন শ্যামল মজুমদার। তিনি জানান, রাস্তায় মিছিল, অবরোধের জেরে অফিসে ঢুকতে দেরি হয়েছে।
বিকাশ ভবনে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে আঞ্চলিক দফতরে হাজির হওয়া কর্মীদের একাংশ জানান, ধর্মঘটীরা অফিসে আসেননি। কিন্তু তাঁদের দফতরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ চলছে।