—ফাইল চিত্র।
করোনা আবহে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখে সেরার বিচার নয়। বরং অতিমারির পরিস্থিতিতে কোন পুজো কমিটি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, ঘরে বসে এ বার সেই বিচার করবে স্কুলপড়ুয়ারা। শহরের কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্রতি বছর পুজোয় তাঁদের পড়ুয়ারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বেশ কয়েকটি পুজো দেখে। কোনটি সেরা, নিজেদের মতো বিশ্লেষণ করে তা নির্বাচিত করে। এ বার ভিন্ন পরিস্থিতি। তাই বদলেছে সেই বিচার পদ্ধতিও।
যেমন, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম ও একাদশ শ্রেণি থেকে নির্বাচিত ৪০ জন পড়ুয়া প্রতি বছর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে সেরা পুজো, সেরা প্রতিমা এবং সেরা মণ্ডপ নির্বাচন করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এ বার পড়ুয়ারা মণ্ডপে ঘুরবে না। স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘করোনা কালে সবই পাল্টে গিয়েছে। এ বার পুজোর আড়ম্বর বিচার্য বিষয় নয়। পুজো সংগঠকদের বলেছি, তাঁরা যদি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন, উপযুক্ত প্রমাণ-সহ সেই নথি এবং ছবি পাঠান। আমাদের ছাত্রেরা সেই নথি দেখে এবং প্রয়োজনে ওই মানুষদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সেরা পুজো সংগঠককে পুরস্কৃত করবে। আমাদের ‘হদয়ের পুজো’ বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।’’
রামমোহন মিশন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্রতি বছর তাঁদের ছাত্রেরা পুজো পরিক্রমায় বেরোয়। প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘নিজেদের বিচারে সেরা পুজো নির্বাচনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু এ বার স্কুলের তরফে পুজো পরিক্রমায় বেরোনো হচ্ছে না।’’ তবে তিনি জানান, কোন পুজো কমিটি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই বিচার করতে পারে পড়ুয়ারা। এমন কিছু করার কথা ভাবা হচ্ছে।
শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানান, প্রতি বছর তাঁদের স্কুলের পড়ুয়াদের পুজো পরিক্রমায় নিয়ে যায় কয়েকটি সংস্থা। মূলত পড়ুয়ারাই বিচারকের ভূমিকা পালন করে। সেরা পুজো নির্বাচনে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। কিন্তু এই বছর করোনার ধাক্কায় এমন কিছু করা হচ্ছে না। ব্রততীদেবী বলেন, ‘‘তবে এ বার কোনও পুজো কমিটি যদি তাদের বাজেট কাটছাঁট করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ায়, স্কুলের তরফ থেকে তাদের কুর্নিশ জানানো যেতেই পারে।’’
ন্যাশনাল ইংলিশ হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল মৌসুমী সাহা জানান, এই বছর পুজো হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য আবহে। করোনার ধাক্কা তো আছেই। আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বহু পরিবার এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মৌসুমীদেবী বলেন, ‘‘এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। পুজো উদ্যোক্তারা কী ভাবে শারদোৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা দেখার জন্য আমরা অবশ্যই পড়ুয়াদের বলব।’’