কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলা ছাত্র বিশ্বজিৎ হাজরা। — নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক দিকে যখন তোলপাড় শহর, তখন র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলেও। সেখানকার এক আবাসিক তথা বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ছাত্র বিশ্বজিৎ হাজরা শনিবার গোপন জবানবন্দি দিতে গিয়েছেন আলিপুর আদালতে। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই হস্টেলে তিনি র্যাগিংয়ের শিকার। কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন, সকলকেই সে কথা জানিয়েছিলেন। কোনও লাভ হয়নি। যাদবপুরের আবহে এ বার আচমকাই সেই ছাত্রের অভিযোগ নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ। তাই আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছে।
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকছিলেন। কিন্তু প্রথম থেকে তাঁর সঙ্গে নানাবিধ ‘অত্যাচার’ হয়ে চলেছে বলে দাবি ওই পড়ুয়ার। চলতি বছরে তাঁর কোর্স শেষ হয়েছে।
অভিযোগ, হস্টেলের ঘরে তাঁকে সিনিয়রেরা ‘ইন্ট্রো’র নামে সারা রাত আটকে রাখতেন, তাঁকে দিয়ে মদ কেনানো হত, চলত অকথ্য গালিগালাজ। এমনকি, ছাত্রের যৌন চাহিদার বিষয়েও প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলা হত বলে দাবি। ছাত্রটি জানিয়েছেন, এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। গত ছ’মাসে র্যাগিংয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিশ্বজিৎ দাবি করেছেন, তাঁর ঘরে সিনিয়রেরা প্রস্রাব করে দিতেন। বোম ফাটিয়ে ঘর ধোঁয়ার ভরিয়ে দেওয়া হত। ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও বাইরে ফেলে দেওয়া হত। এমনকি, ছাত্রের আরও অভিযোগ, তাঁর খাবার পরিকল্পনামাফিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হস্টেল থেকে সম্প্রতি তাঁকে উঠে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ। অভিযোগ, তিনি তথাকথিত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষী খোদ রেজিস্ট্রারের নির্দেশেই নাকি ছাত্রকে হস্টেল থেকে বার করে দিতে চাইছেন। তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এই ঘটনা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। পুলিশ, প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি যাদবপুরের ঘটনায় তাদের টনক নড়েছে। সেই কারণেই বয়ান রেকর্ড করার জন্য আদালতে ডাকা হয়েছে তাঁকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গত ১০ অগস্ট মৃত্যু হয়েছে নদিয়ার এক পড়ুয়ার। তিনি র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং বর্তমান ছাত্র মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জন হস্টেল আবাসিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলেও একই ধরনের র্যাগিংয়ের অভিযোগ এ বার প্রকাশ্যে এল।