মর্গের সামনে প্রতীক্ষা। সোমবার রাতে, এসএসকেএমে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বড়সড় দুর্ঘটনার খবরটা জানার পরেই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন সকলে। সবাই মনে করেছিলেন, ‘ওই সময়ে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন রয়েছে।’
সেই মানসিকতা থেকেই সোমবার রাত ১১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন ফরেন্সিক অ্যান্ড স্টেট মেডিসিন বিভাগের প্রধান ইন্দ্রাণী দাস এবং তাঁর সব সহকারী। চলে এসেছিলেন ডোমেরাও। রাত ১টার মধ্যে স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের সেই বহুতল অফিস থেকে ন’টি দেহই চলে আসে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে। সেখানেই শনাক্ত করার কাজ শেষ হওয়ার পরে প্রতিটি দেহ পাঠানো হয় মর্গে।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নেন, ওই রাতেই ময়না-তদন্ত সেরে ফেলা হবে। সেই মতো সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। হাসপাতালের গাড়ি না নিয়ে ইন্দ্রাণী নিজের ব্যবস্থাতেই পৌঁছে যান সেখানে। তার পরে ময়না-তদন্তের কাজ শুরু করতে নিজের দল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মর্গে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সব মৃতদেহের কাগজপত্র তৈরি হয়ে আসার পরে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইন্দ্রাণীর তত্ত্বাবধানেই রাত ৩টে থেকে শুরু হয় ময়না-তদন্ত। সেই কাজ চলে প্রায় সকাল ৬টা পর্যন্ত। প্রায় ছ’বছর ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে রয়েছেন ইন্দ্রাণী। তাঁর একার তত্ত্বাবধানে ন’টি দেহের ময়না-তদন্তের বিষয়টি অবশ্য বড় করে দেখতে নারাজ তিনি। ইন্দ্রাণী বলেন, ‘‘শুধু আমি কেন, যে কেউই এটা করতেন। পুরো দল মিলে নিজেদের কর্তব্য পালন করেছি।’’
সূত্রের খবর, মৃতদেহগুলি আগুনে ঝলসানোর বিভিন্ন স্তরে ছিল। একটি দেহ অত্যধিক মাত্রায় ঝলসে পুরো কাঠকয়লার মতো হয়ে গিয়েছিল। কারও আবার শরীরের অর্ধেক পুড়েছিল। কারও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ পুড়ে একসঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তবে দু’টি দেহ খুব একটা ঝলসায়নি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মূলত আগুনে ঝলসেই মৃত্যু হয়েছিল ওই ন’জনের। সঙ্গে ছিল শ্বাসরোধ হওয়ার কারণও। বদ্ধ জায়গায় আগুন লাগার ফলে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা একেবারে কমে গিয়ে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে ভরে ওঠে। ধোঁয়ায় শ্বাসযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দমবন্ধ হয়ে লিফটের ভিতরেই দুই রেলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।