রেলভবনে আগুন। ফাইল চিত্র।
কমবেশি ৪৮ বছরের পুরনো নিউ কয়লাঘাট ভবনের বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে সেই প্রশ্নসঙ্কুল তত্ত্বেই সিলমোহর দিচ্ছেন দমকল, ফরেন্সিক, পুলিশ এবং রেলের তদন্তকারী দলের সদস্যেরা।
রেল ও পুলিশ সূত্রের খবর, গত সোমবার সন্ধ্যায় ওই রেল ভবনের ১৪তলায় বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের একটি অংশে ফুলকি দেখতে পান কর্মীরা। তাঁরা তড়িঘড়ি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে তা প্রায় নিয়ন্ত্রণেও এনে ফেলেছিলেন। ওই কাজে সাতটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের রাসায়নিক ভর্তি সিলিন্ডার কাজে লাগানো হয়। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই আকস্মিক ভাবে বিদ্যুতের লোড অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে ওয়্যারিংয়ে আবার আগুন ধরে যায়। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ১৪তলার বিভিন্ন অংশে।
আগুনের উৎস চিহ্নিত করার পরে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা পোড়া তারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই সব নমুনা পরীক্ষার পরেই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে। ‘‘আগুন কোথায় লেগেছিল, তা মোটামুটি চিহ্নিত করা গেলেও আচমকা বিদ্যুতের লোড কেন বেড়ে গেল, তা জানাই এখন প্রধান লক্ষ্য,’’ বৃহস্পতিবার বলেন এক পুলিশকর্তা।
অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন, মঙ্গলবার ঘটনার ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে লালবাজার। এ দিন হেয়ার স্ট্রিট থানার হাত থেকে তদন্তভার বুঝে নেন সিটের সদস্যেরা। দুপুরের দিকে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের চার সদস্য ঘটনাস্থলে যান। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তাঁরা কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের অগ্নিদগ্ধ দু’টি তলা পরিদর্শন করেন। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে একাধিক বার আসেন দমকল দফতরের প্রতিনিধিরা। তাঁরা অগ্নিদগ্ধ লিফট থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। বেলা ৩টে নাগাদ ফের ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক দল। তারা আরও এক দফা ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে। তবে এ দিন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা নতুন কোনও নমুনা সংগ্রহ করেননি বলেই খবর।
রেল সূত্রের খবর, দমকলের অনুমতির ভিত্তিতে নিউ কয়লাঘাট ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত এ দিন খুলে দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পরে রেলকর্মীরা এ দিনই প্রথম ওই ভবনে ঢোকার সুযোগ পান। বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা চালু করার স্বার্থে অগ্নিদগ্ধ উপরের দু’টি তলা বাদ দিয়ে বাকি অংশে কাজ শুরু করার জন্য রেলের তরফে দমকল এবং পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার আগুনে ওই ভবনের ১৩ ও ১৪তলার বাইরের দেওয়াল ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের আঁচ লেগেছে ১২ তলাতেও। তাই সব কিছু যাচাই করেই কাজকর্ম শুরু করা ইত্যাদি ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।