যান-বিরল পথে ঘরে ফেরার ভিড়। শুক্রবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়। ছবি: প্রদীপ আদক
বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে প্রভাব পড়ল শহরের সার্বিক পরিবহণ চিত্রে। বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়া ট্যাক্সি এ দিনও কার্যত চোখেই পড়েনি। শুক্রবার কম চলেছে বেসরকারি বাস-মিনিবাস, কিছু সরকারি বাসও। তবে অটো-মেট্রো চলায় কিছুটা হয়রানি হলেও গন্তব্যে পৌঁছেছেন নিত্যযাত্রীরা।
গত মাসেও সার্বিক পরিবহণ ক্ষেত্রে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। সে দিনে ট্যাক্সি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি। এ দিনও কার্যত তা-ই হয়। পরিবহণ দফতর জানায়, ট্যাক্সি ছাড়া বাস-মিনিবাস-অটো ও সরকারি পরিবহণের বাকি শ্রমিক সংগঠনগুলি শাসক দলের। তাই ওই সব ক্ষেত্রে শাসক দল কিছুটা প্রভাব খাটিয়ে রাস্তায় বাস বার করতে পেরেছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের এক নেতার কথায়, “তিন দিন আগে থেকেই সব ইউনিয়নকে সর্বশক্তি দিয়ে ধর্মঘটের বিরোধিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার ফল মিলেছে।”
আপাত ভাবে ধর্মঘটের প্রভাব খানিকটা কম হওয়ায় স্বস্তিতে সরকার। তবে ধর্মঘট যে পুরোপুরি ব্যর্থ নয়, তার প্রমাণ রাত পর্যন্ত শহরের মোড়ে মোড়ে ভিড়ই। বোঝা গিয়েছে, সমস্যার শিকড় জিইয়ে সাফল্য দাবি কার্যত অর্থহীন।
বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, শাসক দল ও প্রশাসনের হুমকির মুখে অনেক ক্ষেত্রে রাস্তায় বাস বার করতে বাধ্য হন মালিকেরা। কিন্তু সার্বিক ভাবে ধর্মঘটের প্রভাবে তাঁরা খুশি বলে জানান সংগঠনগুলির নেতারা। সরকার ও প্রশাসনের পাল্টা দাবি, শহর বা জেলায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। যার প্রেক্ষিতে শ্রমিক নেতারা বলেন, “জেলায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস চলেইনি।” সরকারি নিগমগুলির দাবি, শুক্রবার অন্য দিনের মতোই বাস চলেছে। যা নিয়ে শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকার হুমকি দিয়ে কর্মীদের কাজ করতে বাধ্য করেছে। তবু ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে নিগমগুলিতেও।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বাংলার সর্বস্তরের পরিবহণ শ্রমিকেরা এ দিন পরিষেবা দিতে রাস্তায় নেমেছেন।” তাঁর অভিযোগ, “ট্যাক্সিচালকদের গুণ্ডামি সরকার বরদাস্ত করবে না।” বিকেলে সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তী দাবি করেন, এ দিন ট্যাক্সি, ম্যাটাডর ১০০ শতাংশ চলেনি। পথে বেরোয়নি ৯৮% ট্রাক এবং বেসরকারি বাস-মিনিবাস চলেনি ৭৫%।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ট্যাক্সি ধর্মঘটে এ দিনও ট্যাক্সি চোখে পড়েনি শহরে। সিটু নেতা শ্যামলবাবু এ দিন ফের সরকারকে আলোচনায় বসার আবেদন করেন। ধর্মঘট তুলে নিতে সরকার দমননীতি নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পাঁচ-ছ’শো ট্যাক্সি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পড়ে থাকা ওই সব ট্যাক্সির যন্ত্রাংশের কিছু হলে তার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।” আজ, শনিবার দুপুর দুটোয় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ট্যাক্সিচালকেরা লালবাজার অভিযান করবেন। সোমবার পিভিডি অভিযানও করবেন তাঁরা।
তবে ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা এ দিনও নাকচ করে দেয় সরকার। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সি আটক করা বজায় থাকবে বলেও জানান পরিবহণ কর্তারা। যা নিয়ে সিটু নেতা অনাদি সাহুর অভিযোগ, “পরিবহণমন্ত্রী আগে আলোচনায় বসার আশ্বাস দেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখন আর আলোচনায় বসতে চাইছেন না।” পরিবহণ দফতর জানায়, এ দিন পরিবহণমন্ত্রী ট্যাক্সিচালকদের বোঝানোর চেষ্টা চালান। জানিয়ে দেন, ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া অবস্থানই নেবে।