স্টলের গেরোয় আটকে ‘প্লাস্টিক হটাও’

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গড়িয়াহাট মোড়ে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনের উৎসস্থল ছিল একটি প্রসিদ্ধ কাপড়ের দোকানের পিছনের মিটার বাক্স।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৭
Share:

অনিয়ম: গড়িয়াহাটের ফুটপাত জুড়ে বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

প্রায় দু’মাস পরেও একশোটি স্টলের শুধু চাকা লাগানোর কাজই শেষ করতে পারল না কলকাতা পুরসভা! যার জেরে ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরানোর কথা পুরসভা বললেও তা কার্যকর হল না আজও। ফলে গড়িয়াহাট অগ্নিকাণ্ডের তিন মাস পরেও ফুটপাত জুড়ে বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছে রং-বেরঙের প্লাস্টিক। স্টল দেওয়ায় দেরি প্রসঙ্গে পুরসভার দাবি, নকশা বদলের কারণে এই পরিস্থিতি। ভোটের পরে সে সব হকারদের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে পুরসভা।

Advertisement

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গড়িয়াহাট মোড়ে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনের উৎসস্থল ছিল একটি প্রসিদ্ধ কাপড়ের দোকানের পিছনের মিটার বাক্স। বাড়িটির চারদিকে স্টলে ঘেরা প্লাস্টিকের ছাউনির কারণে দ্রুত তা ছড়িয়ে যায়। যার জেরে পুড়ে গিয়েছিল প্রায় ৪৫টি স্টল এবং কয়েকটি বাড়ি। এর পরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, শহরের ফুটপাতে প্লাস্টিক রাখা যাবে না। ওই নির্দেশের পরে গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট ও হাতিবাগানের ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরাতে দু’-তিন বার অভিযানও চালানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আশপাশের ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই হরেক রংয়ের প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঢাকা। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এখনও ফুটপাত জুড়ে যে ভাবে প্লাস্টিক ঝুলছে তাতে ফের বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। গড়িয়াহাট মোড়ের রেস্তরাঁয় এখনও গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করা চলছে। ফুটপাতের ছোট-বড় খাবারের দোকানেও ঝুলছে প্লাস্টিকের চাঁদোয়া।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

যে বাড়িটি আগুনে পুড়ে গিয়েছিল তার কাছের ফুটপাতে কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকারেরা। প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন ব্যবহার করছেন? এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘মালিককে জিজ্ঞাসা করুন।’’ মালিকের প্রশ্ন, ‘‘ঝড়বৃষ্টি হলে সব জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে। তখন কী করব?’’ গড়িয়াহাট মোড়ের আশপাশে রয়েছেন প্রায় চার হাজার হকার। দু’টি সংগঠনের ছাতার তলায় থাকেন তাঁরা। গড়িয়াহাট

ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন ধরের কথায়, ‘‘মেয়র আশ্বাস দিয়েছিলেন, চাকা লাগানো স্টল দেবেন। কিন্তু প্লাস্টিকের সেই বিকল্প এখনও তো হাতেই পেলাম না! সেখানে কালবৈশাখীর মরসুমে প্লাস্টিক সরিয়ে নিলে তো বিপদ! সারা বছর চৈত্র মাসের এই বিক্রির দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকি।’’ অন্য সংগঠন বালিগঞ্জ হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রবি সাহা বলেন, ‘‘চৈত্র সেল পার হতে দিন। তার পরে আমরা নিজেরাই প্লাস্টিক সরিয়ে নেব।’’

তিন মাস আগের স্মৃতি এখনও টাটকা পুড়ে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘এত বড় বিপর্যয়ের পরেও কারও হেলদোল নেই! এখনও প্লাস্টিকের জতুগৃহেই আতঙ্কে কাটাচ্ছি।’’ গড়িয়াহাট মোড় থেকে থানা মেরেকেটে একশো মিটার। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্লাস্টিক সরাতে গড়িয়াহাট থানায় বহু বার দরবার করেছি। কাজ যে হয়নি তা তো দেখতেই পারছেন।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরাতে গড়িয়াহাট থানা থেকে সব হকারদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। চৈত্র সেলের মরসুম চলছে, হকারেরা তাই পুলিশের কাছে প্লাস্টিক রাখার আর্জি জানিয়েছেন। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘হকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্লাস্টিক কিছুতেই রাখা যাবে না। তবে চৈত্র মাসে কালবৈশাখীর কথা ভেবে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও কালবৈশাখীর অজুহাত মানতে রাজি নন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘কালবৈশাখী পর্যন্ত সময় দেওয়া হল কেন? এর পরে গ্রীষ্ম, বর্ষা আসবে। তখনও তো একই আর্জি তোলা হবে।’’ প্লাস্টিক হটানোর এই বিলম্বের মূল কারণ যে স্টল পেতে দেরি তা মানছেন সব পক্ষই।

অগ্নিকাণ্ডের পরে হকারদের জন্য মেয়র প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০টি গাড়ি দেওয়া হবে বলেছিলেন। এর মাস খানেক পরে সেই গাড়ি বিতরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, চাকা নেই। তখন মেয়র নির্দেশ দেন, গাড়িগুলিতে চাকা লাগাতে হবে।

সেই কাজ করার কথা এন্টালি ওয়ার্কশপে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘গাড়িগুলি তৈরি হওয়ার পরে নকশা বদল হয়েছে। এ জন্যই দেরি হচ্ছে।’’

দেরি প্রসঙ্গে মেয়রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোট মিটলে বিষয়টি দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement