লগ্নি টানতে বাইক ট্যাক্সির বিধি বদল

কলকাতায় বাইক-ট্যাক্সি চালাতে চায় ওলা, উবেরের মতো বড় সংস্থাও। ওই সব সংস্থাকে জায়গা করে দিতে বাইক-ট্যাক্সি সংক্রান্ত বিধি পরিবর্তনের কথা ভাবছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এত দিন পর্যন্ত পরিবহণ দফতরে নিয়ম ছিল, যে সংস্থা বাইক-ট্যাক্সি পরিষেবা দেবে, সব মোটরবাইক হতে হবে তাদেরই।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩১
Share:

কলকাতায় বাইক-ট্যাক্সি চালাতে চায় ওলা, উবেরের মতো বড় সংস্থাও। ওই সব সংস্থাকে জায়গা করে দিতে বাইক-ট্যাক্সি সংক্রান্ত বিধি পরিবর্তনের কথা ভাবছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এত দিন পর্যন্ত পরিবহণ দফতরে নিয়ম ছিল, যে সংস্থা বাইক-ট্যাক্সি পরিষেবা দেবে, সব মোটরবাইক হতে হবে তাদেরই। কিন্তু এমন নিয়ম থাকলে ওলা-উবের বাইক-ট্যাক্সি চালাতে নারাজ। সে কারণে এ বার এই নিয়মে পরিবর্তন আনতে চায় পরিবহণ দফতর। কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

গত বছরের জুলাই মাসে বাইক-ট্যাক্সিকে আইনি বৈধতা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এর পরেই ঠিক হয় বাইক-ট্যাক্সির ‘পাইলট’ প্রকল্প হবে নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান এবং টু-তে। সফল হলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে কলকাতা, বিধাননগর ও হাওড়ায়। গলিঘুঁজিতে যাত্রী নিয়ে যেতে বাইক-ট্যাক্সি খুবই উপযোগী হবে বলে মনে করেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। কিন্তু কেন একই সংস্থার অধীনে সব মোটরবাইকের মালিকানা থাকার নিয়ম?

পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এর পিছনে প্রধান কারণই ছিল নিরাপত্তা। একই মালিকের অধীনে সব বাইক থাকলে, সেই সংক্রান্ত নথি রাখা এবং তাদের চালকের হদিস রাখা সহজ। সে কারণেই এমন নিয়ম রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনে সেই নিয়ম পরিবর্তনে অসুবিধে নেই বলেই জানাচ্ছেন তাবড় পরিবহণ-কর্তারা। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা চাই রাজ্যে বিনিয়োগ আসুক। ওলা, উবেরের মতো সংস্থা যদি কলকাতা, হাওড়া ও বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় সফল ভাবে বাইক-ট্যাক্সি চালাতে চায়, তা হলে কর্মসংস্থান হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি থাকার কোনও প্রশ্নই নেই।’’

Advertisement

সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি নতুন মোটরবাইক কিনে তা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে পরিবহণ দফতর তাতে অনুমোদন দেবে। একইসঙ্গে, এখন যাঁদের মোটরবাইক রয়েছে, তাঁরাও যাতে চাইলে যাত্রী পরিবহণ করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনে তাঁদের বাণিজ্যিক পারমিট দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

কলকাতায় বাইক-ট্যাক্সি চালাতে ইতিমধ্যেই উৎসাহ দেখিয়েছে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর পরিবহণ সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যেই ভারতের হায়দরাবাদ, গুরগাঁও, জয়পুরের মতো কয়েকটি শহরে বাইক-ট্যাক্সি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে বলে দাবি করছে ওলা-উবের। কলকাতার নিউ টাউনে প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে জানিয়ে উবেরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গুরগাঁওয়ের সঙ্গে কলকাতার নিউ টাউন, রাজারহাট, সল্টলেকের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ওখানে যদি বাইক-ট্যাক্সি জনপ্রিয় হতে পারে, এখানেও হবে।’’ একই মত ওলা, উবেরের কর্তাদের। ইতিমধ্যে দুই সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সরকার চাইলে সবিস্তার প্রস্তাব দিতেও তাঁরা প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন দুই সংস্থার কর্তারা।

বর্তমানে নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান এবং টু-তে দু’টি সংস্থা বাইক-ট্যাক্সি পরিষেবা শুরু করেছে। প্রথমে একটি সংস্থা কুড়িটির মতো বাইক নিয়ে পরিষেবা শুরু করেছিল। সাফল্য মেলার পরে চলতি মাসেই নববর্ষের দিন থেকে আরও একটি সংস্থা পরিষেবা দিতে শুরু করেছে। এর পরেই ওলা, উবেরকে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকার।

তবে বাইকের মালিকানা সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তন করা হলেও নিরাপত্তা বিধিতে কোনও পরিবর্তন আনা হবে না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্য পরিবহণ-কর্তারা। সে ক্ষেত্রে বাইকওয়ালা নিয়োগের ক্ষেত্রে যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হবে ওলা, উবেরকেই। নিয়োগের আগে সব খতিয়ে দেখে নিতে হবে সরকার নির্দিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাকে দিয়ে। নিয়মিত বাইকগুলির চলাফেরার রেকর্ড রাখতে হবে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে। এমনকী, পরিষেবা দেওয়ার অ্যাপেই থাকতে হবে ‘প্যানিক বাটন’ যার মাধ্যমে যাত্রীর সঙ্গে সংস্থার, পুলিশের এবং ঘনিষ্ঠ দু’জনের নম্বর যুক্ত থাকবে। সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়েছে, চালকের ব্যবহার ভদ্র হতে হবে। আর যাত্রীকে পরিষ্কার হেলমেট দিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement