গড়িয়া মোড় থেকে মেট্রো চালুর পর ভিড় কমেছে ওই রুটের বাস ও অটোয়। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ধর্মতলাগামী অফিসযাত্রীরাও অনেকে নেমে পড়ছেন নিউ গড়িয়া স্টেশনে। সেখান থেকে মেট্রোয় সোজা ধর্মতলা। আগামী পাঁচ-ছ’বছরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-সহ একাধিক মেট্রো রুট চালু হবে শহরে। তার পরে বহু বাসরুট প্রাসঙ্গিকতা হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই শহরে বাসরুটের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত, তা আগে থেকেই সমীক্ষা করতে চায় রাজ্য পরিবহণ দফতর। প্রাথমিক ভাবে তারা দ্বারস্থ হয় বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে। বিশ্বব্যাঙ্ক ওই কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক সমীক্ষার ভার তারা দিয়েছে ‘রাইট্স’-এর উপর।
১৭ ডিসেম্বর রাইট্স এই সমীক্ষার কাজ শুরু করতে চলেছে। সরকারি নিগম, বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের বিভিন্ন সংগঠন, রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসারদের নিয়ে ওই দিন বৈঠকে বসছে রাইট্স। কোথায় কী রুট আছে, নয়া মেট্রো হলে কোন রুটের উপরে প্রভাব পড়তে পারে, কোন রুটে নতুন করে বাস চালানো প্রয়োজন— তা নিয়ে আলোচনা শুরু করবে ওই সংস্থাটি।
এর আগে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণ ছাড়া প্রযুক্তিগত সাহায্যের (নন-লেন্ডিং টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) খাতে টিকিট ব্যবস্থার সমন্বয় সাধনের কাজও শুরু করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এ বার ওই খাতেই বাসরুট পুনর্বিন্যাসের কাজও শুরু করল তারা। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, বেসরকারি বাস, মিনিবাস, সরকারি সব রুটেরই পুনর্বিন্যাসের জন্য এই সমীক্ষা শুরু হচ্ছে।
এক পরিবহণকর্তা বলেন, ‘‘উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো রুট প্রথমে দমদম থেকে টালিগঞ্জ এবং পরে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত চালু হয়। তখন বাসরুটের পুনর্বিন্যাস হয়নি। ফলে মেট্রো রুটের বাসে যাত্রী কমেছে। আবার মেট্রো স্টেশনে আসতে নয়া রুট চালু না হওয়ায় সেই রুটে বেড়েছে অটোর রমরমা। নতুন মেট্রো রুট চালু হলে ফের যাতে এই সমস্যা না হয়, তাই সাবধান হচ্ছে সরকার।’’
এখন কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ছাড়াও চলছে জোকা-বিবাদী বাগ ও নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো রুটের কাজ। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পরে ওই সব প্রকল্পে গতিও এসেছে। পাঁচ-ছ’বছরের মধ্যে সেগুলি চালু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী রাজ্য। আর ওই সব প্রকল্প চালু হলে বেহালা থেকে ধর্মতলা, ইএম বাইপাসের নানা রুট, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার সংযোগকারী কিছু বাসরুটের জনপ্রিয়তা আগের মতো থাকবে না বলেই মত পরিবহণ কর্তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারি, বেসরকারি— সব রুটই। তাই শহরের বাসরুটের নতুন চালচিত্র কেমন হতে পারে, বিশ্বব্যাঙ্কের সাহায্যে তা ঠিক করতে চাইছে পরিবহণ দফতর। এমনকী, কোথায় সরকারি আর কোথায় বেসরকারি বাস চলা উচিত, প্রাথমিক ভাবে তা-ও সমীক্ষার রিপোর্টে নির্দিষ্ট করা হবে। রিপোর্টের ভিত্তিতেই বাসরুটের পুনর্বিন্যাস করবে সরকার।