গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দক্ষিণ কলকাতার যুব তৃণমূল নেতা কুমার সাহাকে ‘এক্স ক্যাটাগরি’র নিরাপত্তা দিল রাজ্য সরকার। যদিও সরকারি ওই সিদ্ধান্ত ঘিরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শাসক দলের অন্দরে।
কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হওয়ার পর শাসক দলের বিভিন্ন নেতার নিরাপত্তা বিষয়ে রিভিউ বৈঠকে বসেছিলেন ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটিস-এর কর্তারা। সেই বৈঠকেই জেলা এবং কলকাতার বিভিন্ন নেতার বিপদের সম্ভাবনা ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, দক্ষিণ কলকাতার যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক কুমার সাহাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটিস-এ কুমার সাহাকে নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি এক্স ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাবেন।”
তবে ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটিস সূত্রে খবর, কুমারের জন্য সর্ব ক্ষণের দু’জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘কুমার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছাড়াও তাঁর কালীঘাটের গ্রিক চার্চ রোডের ফ্ল্যাটেও নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন। আমরা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি।’’ সূত্রের খবর, প্রয়োজনে কুমারের ফ্ল্যাটে ২৪ ঘণ্টা এক জন পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে আরও চার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হতে পারে। চার তলার ওই ফ্ল্যাটেই সপরিবারে থাকেন কুমার সাহা।
কালীঘাট পার্কের পিছনে মসজিদ বাড়িতেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কুমার সাহার। ওই জমি জবরদখল করা বলেই স্থানীয়দের একাংশের দাবি। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার পুরনো নথি বলছে, রাসবিহারী এবং ভবানীপুর এলাকার দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার শ্রীধর এবং মুন্না পাণ্ডের সঙ্গে কুমার ও তাঁর দলবলের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কুমারের কালীঘাট এলাকার ‘দাদা’ হয়ে ওঠার গল্প গুন্ডাদমন শাখার অনেকেই জানেন বলে দাবি এক পুলিশ আধিকারিকের।
আরও পড়ুন: ডিএ মামলায় রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ হাইকোর্টে
আরও পডু়ন: ফের প্রকাশ্যে পাকিস্তানের দ্বিচারিতা, জঙ্গি শীর্ষনেতাই এ বার ইমরানের দলে
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, একাধিক বার লালবাজারের সেন্ট্রাল লক আপের ‘অতিথি’ কুমার সাহা এক সময়ে ছিলেন কংগ্রেসের ছত্রছায়ায়। ২০১৪ সালে মুকুল রায়ের হাত ধরে শাসক দলে যোগ দেওয়ার সময়ও অনেকেই ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি কুমারের দলে অন্তর্ভুক্তি। কুমারের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাড়ি তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সীর। কুমার যে দিন তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলেন দলে যোগ দিতে, সে দিন উপস্থিত থাকার কথা ছিল সুব্রতবাবুরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠান। তবে তাতে কিছু আটকায়নি কুমারের।
কুমারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনেছেন দক্ষিণ কলকাতার প্রায় সব তৃণমূল নেতাই। শাসক দলের দক্ষিণ কলকাতার এক নেতা ওই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অসন্তোষ চেপে রাখতে না পেরে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কার সুপারিশে কুমার নিরাপত্তা পাচ্ছে তা আমরা জানি। কুমারকে নিরাপত্তা দিলে দলেরই বদনাম হবে। গোটা দক্ষিণ কলকাতার মানুষ জানেন কুমারের অতীত এবং এখনও তিনি কী করেন।’’ তৃণমূলের একটা অংশের দাবি, কুমার যুব তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অফিস। হাতে গোনা কয়েক জন বাদে কোনও বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি সে সময়। তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার এক নেতা বলেন, ‘‘গোটা ওই অপারেশনের দায়িত্বে ছিল কুমার। ওর সঙ্গী মোটা বাবু, পিন্টুরা ওই অপারেশন চালায়।’’ তৃণমূলের অন্দরে খবর, আলিপুরের ‘সাফল্য’-র পরেই যুব তৃণমূলে দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি অত্যন্ত ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছেন। যুবর যে কোনও সভায় থাকে কুমারের সঙ্গীদের বাইকের বিশাল মিছিল।
কিন্তু যাঁর নামে পুলিশের কাছে এত ধরনের অভিযোগ তিনি কী করে এক্স ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন? কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি যদি মনে করেন কোনও ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি আছে এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন, তখন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।” তবে নিচুতলার পুলিশকর্মীরা আক্ষেপ করে বলছেন, যাঁকে এক সময় আমরা তাড়া করে বেড়াতাম এখন তাঁকেই নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে!
আর কুমার সাহা নিজে কী বলছেন? এ দিন বিকেলে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কোনও ধরনের নিরাপত্তার আর্জি জানাইনি। দল যদি মনে করে থাকে সেটা দলের সিদ্ধান্ত।”
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)