ঠিকা প্রজা (টেনান্সি) আইনে সংশোধনী আনল রাজ্য সরকার। এর ফলে কলকাতা ও হাওড়ায় প্রায় ২৫০০ একর জমিতে বহুতল নির্মাণের সুযোগ তৈরি হল। পাশাপাশি, সরকার এ বার ঠিকা প্রজাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে জমি লিজ় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
রাজ্য ভূমি দফতর সূত্রের খবর, এখন কলকাতায় দু’হাজার এবং হাওড়ায় পাঁচশো একর জমিতে ঠিকা প্রজারা বসবাস করছেন। মূলত জমিদারেরা তাঁদের প্রজাদের এক সময়ে এই সব জমিতে বসিয়েছিলেন। পরে সরকার খাস ঘোষণা করে জমির মালিকানা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ৮০ হাজারেরও বেশি প্লটে বসবাসকারী ঠিকা প্রজারা আবার পরবর্তীকালে অনেক ভাড়াটে বসিয়েছিলেন। কলকাতা ও হাওড়ায় মূলত বস্তি এলাকাগুলিই ঠিকা প্রজাদের দখলে রয়েছে।
জমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকায় এত দিন ওই সব জমিতে বহুতল নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সামনের বছর কলকাতা পুরসভার ভোট। এ বারের লোকসভা ভোটে প্রায় ৫০টি ওয়ার্ডে হেরেছে শাসক দল তৃণমূল। ফলে এখন বস্তিবাসী ঠিকা প্রজাদের হাতে জমির লিজ় দিতে পারলে ভোটে সুবিধা হবে বলেই মনে করছে শাসক দলের একাংশ। পাশাপাশি, কলকাতার বুকে ২০০০ একর জমিতে বহুতল নির্মাণের রাস্তা খুলে গেল বলেও মনে করা হচ্ছে।
কী ভাবে?
ভূমি দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আইনে সংশোধন এনে ঠিকা প্রজাদের এ বার ঠিকা লেসি-র মর্যাদা দেওয়া হবে। সেলামি দিয়ে তাঁরা ৩০ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত জমির লিজ় নিতে পারবেন। ঠিকা প্রজার জমিতে থাকা ঠিকা ভাড়াটেরা আবার ‘ঠিকা অ্যাসাইনি’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ফলে লিজ় পাওয়ার পরে ওই ভাড়াটেদের অধিকার খর্ব করতে পারবেন না কোনও ঠিকা প্রজা। ঠিকা জমিতেও এখন থেকে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার ‘বিল্ডিং রুলস’ কার্যকর হবে। ফলে বস্তির জমিতে বহুতল নির্মাণে কোনও বাধা থাকছে না।
যদিও ভূমি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, কোনও প্রোমোটার ওই জমিতে বহুতল বানাতে পারবেন না। শুধুমাত্র ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটে যদি যৌথ ভাবে বহুতল নির্মাণ করতে চান, তা হলে সরকার তা মঞ্জুর করবে। প্রশ্ন উঠেছে, ঠিকা প্রজা জমির লিজ় পেলে তাঁর অধিকার অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় কোনও ব্যক্তির সাহায্যে যদি বহুতল নির্মাণ শুরু করেন, সরকার আটকাবে কী করে? ভূমি দফতরের এক কর্তা বলেন,‘‘সরাসরি কোনও প্রোমোটার বস্তির জমিতে বহুতল নির্মাণ করতে পারবেন না। ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটেদের উৎখাতও করতে পারবেন না।’’