জাতীয় গ্রন্থাগারের রিডিং রুম। ফাইল চিত্র
কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের ভবনে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করছে। হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ভবনগুলিতে কাঠামোগত পরিবর্তন করা সত্ত্বেও সে সম্পর্কে রাজ্য সরকারকে জানানোর কোনও প্রয়োজন বোধ করছে না। এমনটাই অভিযোগ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের। শুধু কলকাতাই নয়, রাজ্যের সর্বত্রই কেন্দ্রীয় সরকারের হেরিটেজ ভবনগুলিতে কমবেশি এমন পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে কমিশন সূত্রের খবর। হেরিটেজে কেন্দ্রের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের একাংশ।
সম্প্রতি জাতীয় গ্রন্থাগারের বেলভেডিয়ার হাউস নতুন ভাবে সংস্কার করা হয়েছে। আগে ওই ভবন সংস্কারের দায়িত্বে ছিল ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)। কিন্তু পরে তা কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রকের হাতে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রকই ওই ভবন নতুন ভাবে সংস্কার করেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।কিন্তু রাজ্য হেরিটেজ কমিশন জানাচ্ছে, ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ তালিকার ওই ভবনে যে সংস্কারের কাজ করা হল, তা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জানানো হয়নি কমিশনকে। অনুমতি নেওয়া তো দূর, কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি সংস্কারের কাজ সম্পর্কে। ফলে কী ভাবে সংস্কারের কাজ হয়েছে, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে কমিশন। অবশ্য শুধু জাতীয় গ্রন্থাগারই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বহু হেরিটেজ ভবনের সংস্কার হেরিটেজ কমিশন বা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিকে অন্ধকারে রেখেই করা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
হেরিটেজ কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘জাতীয় গ্রন্থাগারের মতো গ্রেড ওয়ান ভবনে সামান্য সংস্কারের কাজ করতে হলেও আমাদের বা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিকে জানানোর কথা।’’ জাতীয়গ্রন্থাগারের অধিকর্তা অরুণকুমার চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘এর আগেও যখন সংস্কার হয়েছে, তখনও কিছু জানানো হয়নি। কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রকই সংস্কার করেছে এ বার।’’
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর আগে ভারতীয় জাদুঘরেও একাধিক বার না জানিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় সম্প্রতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পুরসভার হেরিটেজ কমিটির অনুমতি নিচ্ছেন। জাদুঘরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভবনে সংস্কারের কাজ করতে সাধারণত কোনও অনুমতি নিতে হয় না। তবু আমরা হেরিটেজ কমিটির অনুমতি নিয়েই কাজ করেছি।’’
হেরিটেজ আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, রাজ্যের হোক বা কেন্দ্রের, হেরিটেজ ভবন হলে তাতে সংস্কারের কাজের ক্ষেত্রে হেরিটেজ কমিশন বা কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির অনুমতি নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। অথচ, প্রতি পদেই সেই নিয়মের লঙ্ঘন করা হচ্ছে। হেরিটেজ আইনে ফাঁক থাকার জন্যই সেই নিয়ম লঙ্ঘন আটকানো যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, হেরিটেজ আইন কড়া না হওয়া পর্যন্ত এটা আটকানো যাবে না। হেরিটেজ আইনকে কড়া করতে এক বার নতুন ভাবে খসড়া তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘হেরিটেজ আইনের খসড়া নতুন ভাবে তৈরি করা দরকার। হেরিটেজ-বিধি লঙ্ঘন করলে যে শাস্তির মুখে প়ড়তে হবে, এটাও জানা দরকার।’’