—ফাইল চিত্র।
নিজের রক্তেই মিলতে পারে যন্ত্রণার উপশম! অস্ত্রোপচার ছাড়াই সম্প্রতি এমন চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হল এসএসকেএম হাসপাতালে! পিআরপি (প্লেটলেট রিচ প্লাজমা) পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা শুরু করেছে ওই হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ।
কী এই পিআরপি পদ্ধতি?
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক জানান, এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীর থেকে প্রথমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এর পরে ওই সংগৃহীত রক্ত বিশেষ যন্ত্রে তীব্র গতিতে ঘোরানো হলে তাতে তিনটি স্তর তৈরি হয়। তারই একটি হল, প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা বা পিআরপি। রোগীর আঘাত পাওয়া জায়গা চিহ্নিত করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেখানে পিআরপি দেওয়া হয়। দু’সপ্তাহ অন্তর তিন ধাপে রোগীকে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের দাবি, সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার মাধ্যমে যন্ত্রণা থেকে নিস্তার মিলেছে দুই রোগীর। বাঁ হাতের যন্ত্রণায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন এক লেখিকা। অসহনীয় যন্ত্রণার কারণে পুজো সংখ্যায় লিখতে পারেননি তিনি। অন্য দিকে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক থেকে রাস্তায় পড়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন ডোমজুড়ের যুবক অনুজ নস্কর। চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিল এক বেসরকারি হাসপাতাল। দু’জনকেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পেশায় সোনার কারিগর অনুজের এত খরচ করে চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না। গ্রামেরই এক দাদার মাধ্যমে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে যান অনুজ। দু’জনের ক্ষেত্রেই পিআরপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
থেরাপি প্রসঙ্গে রাজেশবাবুর উক্তি, ‘‘ব্যথা কমাতে এ হল গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো! পিআরপি-র ভিতরে প্রচুর গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে। সেটাই ক্ষতস্থানকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করছে।’’ লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার জানান, দশ মাস ধরে কাঁধের ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি। মাস ছয়েক আগে তা অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তিন জন অস্থি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। তিলোত্তমা জানান, তাঁদের পরামর্শ মেনে ফিজিয়োথেরাপি করেও কোনও লাভ হয়নি। এক সময়ে অফিস যাতায়াত বন্ধ হয় তাঁর। এমআরআই করানোর পরে তাঁকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন এক চিকিৎসক। এর পরেই এক পরিচিতের মাধ্যমে এসএসকেএমের দ্বারস্থ হন তিনি।
ওই চিকিৎসক জানান, খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পায়ে আঘাত, লিগামেন্ট এবং কাঁধের শিরায় চোট লাগলে পিআরপি পদ্ধতি প্রয়োগ করে চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে। পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, টেনিস এলবোর ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি ভাল সাড়া দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। তবে হাঁটু মুড়ে চোট এবং লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে গেলে, পিআরপি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশেষ লাভ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিলোত্তমা বলেন, ‘‘এই পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকের কাছেই ধারণা নেই। চিকিৎসা করে ব্যথা কমায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি আমি।’’
এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টেনিস এলবো, বাতের ব্যথা, কব্জির ব্যথা, লিগামেন্ট এবং মাংস পেশীর মতো সমস্যায় অস্ত্রোপচার ছাড়া এই পদ্ধতি এখন ব্যবহার হচ্ছে। তাতে সুফলও মিলছে।’’ যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক রাজা ভট্টাচার্যের বলেন, “এই পদ্ধতির বিরুদ্ধেও মতামত রয়েছে।”
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।