কর্মী কম, কে পথ দেখাবেন হাসপাতালে!

দগ্ধ শিশুকে নিয়ে ভাঙড়ের এক বাসিন্দার প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুরপাক খাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এদিন এমন অভিজ্ঞতা হল এসএসকেএম হাসপাতালে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share:

হয়রানি: পুড়ে যাওয়া সুহানা খাতুনকে কোলে নিয়ে মা। নিজস্ব চিত্র

‘‘কার্ডিয়োলজি কোন দিকে?’’

Advertisement

‘‘ও দিকে যান। পাবেন।’’

‘‘রোগী সহায়ক কেন্দ্র কোথায়?’’

Advertisement

‘‘এখন কেউ নেই।’’

শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে জরুরি বিভাগের অবজারভেশন রুমের সামনে থাকা নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে এমনই কথোপকথন হল। জরুরি বিভাগের আর এক দিকেই রোগী সহায়ক কেন্দ্র। সেখানে কিন্তু হলুদ পোশাকে দু’জন রয়েছেন। কার্ডিয়োলজি বিভাগ কোথায় জানতে চাইলে উত্তর, ‘‘সামনে এগিয়ে অনেকগুলো নীল রঙের বড় বাড়ি দেখতে পাবেন। ওখানে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে বলে দেবে।’’ আপনাদের মতো ওখানেও কেউ আছেন? উত্তর, ‘‘না! তবে, অনেক লোক দেখতে পাবেন। কেউ না কেউ বলে দেবে।’’

দগ্ধ শিশুকে নিয়ে ভাঙড়ের এক বাসিন্দার প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুরপাক খাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এদিন এমন অভিজ্ঞতা হল এসএসকেএম হাসপাতালে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, কোন দিকে কোন বিল্ডিং রয়েছে, তা বোঝানোর জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের ১৬ জন কর্মী হলুদ পোশাকে হাসপাতাল চত্বরে রয়েছেন। তাঁদের মাসিক বেতন ওই সংস্থার মাধ্যমেই দেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি বিভাগের সামনে দু’জন ছাড়া আর কোথাও তখন হলুদ পোশাক পরা কোনও সহায়কের দেখা

পাওয়া যায়নি।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালের রোগীদের সাহায্য করা ওই কর্মীদের দায়িত্ব। নিউরো, সার্জারি-সহ একাধিক বিভাগে

১৬ জনকে ভাগ করে দেওয়া হয়। তবে, এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে প্রতি দিন কয়েক লক্ষ রোগী আসেন। তাই সবটা হচ্ছে না। ওঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দিন কয়েক আগে রোগী পরিষেবা কেন্দ্র চালু করেছে। এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ মাদার-চাইল্ড হাবের নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে ইএনটি বিভাগ কোথায় জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘ইমার্জেন্সিতে যান। কিয়স্ক পাবেন।’’ সেটা কোন দিকে? তাঁর উত্তর, ‘‘এগিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করুন। বিরক্ত করবেন না!’’ কোন রাস্তায় গেলে জরুরি বিভাগে যাওয়া যাবে, তার স্পষ্ট দিকনির্দেশ দেখা গেল না। ফলে জরুরি বিভাগে পৌঁছতে হলে চত্বরে থাকা লোকজনই ভরসা। ওই বিভাগের সামনে রোগী সহায়তা কেন্দ্রে ছিলেন নিরাপত্তা কর্মী (কর্তৃপক্ষ পরিষেবা কেন্দ্রে দু’জন নিরাপত্তা কর্মীকেই বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন)। ইএনটি বিভাগের কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘‘সোজা যান। ডান দিকে পাবেন।’’ সেই মতো এগিয়ে জলের ট্যাঙ্ক। চায়ের দোকানের এক কর্মী আবার জানালেন, সোজা গিয়ে বাঁ হাতে। আবার হাঁটলে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি বিল্ডিং। কিন্তু কোনটা ইএনটি ওয়ার্ড, বোঝা মুশকিল। ভরসা পথচলতিরাই।

শুধুমাত্র ২ নম্বর দরজার কাছে একটি কিয়স্ক রোগীদের কতটা সাহায্য করবে? এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রত্যেকটি প্রবেশ দ্বারের পাশে রোগী সহায়তা কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার জন্য কিছুটা সময় লাগবে।’’

এনআরএস এবং আরজিকর হাসপাতালেও একই দৃশ্য। এদিন দুপুরে গোটা চত্বর ঘুরে রোগীদের সহায়ক হিসাবে নির্দিষ্ট পোশাক পরা কাউকে অন্তত চোখে পড়েনি। এনআরএসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘রোগী সহায়ক কেন্দ্রে ১৬ জন রয়েছেন। আউটসোর্স করা হয়েছে। নীল অ্যাপ্রন পরা ওই কর্মীরা জরুরি বিভাগ-সহ একাধিক জায়গায় থাকেন।’’ আরজিকর হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement