পেটে ফুটো করে তৈরি অস্থায়ী পায়ুদ্বার দিয়ে এ ভাবেই বেরিয়ে এসেছিল খাদ্যনালির অংশ। নিজস্ব চিত্র
পেটের উপরে ফুটো করে তৈরি পায়ুদ্বার দিয়েই বেরিয়ে এসেছিল খাদ্যনালির কিছুটা অংশ। সেখান দিয়েই শুরু হয় রক্তপাত। কিছু খেলেই তীব্র যন্ত্রণা হত। এই ভাবেই দিন কাটছিল জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ছ’মাস বয়সি শিশুর। অবশেষে পেট কেটে খাদ্যনালির বেরিয়ে আসা অংশকে যথাস্থানে বসিয়ে, নতুন পায়ুদ্বার তৈরি করে শিশুটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিল এসএসকেএম হাসপাতাল।
পিজি-র শিশু শল্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জন্মের পরে দেখা গিয়েছিল যে ওই শিশুটির ‘অ্যানোরেক্টাল ম্যালফর্মেশন’ (এআরএম) রয়েছে। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অরবিন্দ প্রধান নামে ওই শিশুর জন্মের পরে দেখা যায়, তার পায়ুদ্বার যথাস্থানে নেই। তার বদলে সেটি রয়েছে টেল বোনের অনেকটা উপরে। সেই পরিস্থিতিতে দু’-তিন দিন বয়সি অরবিন্দের পেটের উপরে ফুটো করে অস্থায়ী পায়ুদ্বার তৈরি করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, এর পরে দেখা যায়, ওই ফুটো দিয়ে ক্রমশ বেরিয়ে আসছে শিশুটির খাদ্যনালি। সন্তানের এমন অবস্থা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তার বাবা-মা। শেষে তাঁদের পাঠানো হয় পিজিতে। প্রথম যখন অরবিন্দ কলকাতার ওই হাসপাতালে আসে, তখন তার বয়স ছিল পাঁচ মাস ১৫ দিন। শিশু শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রুচিরেন্দু সরকার জানান, শিশুটিকে পরীক্ষা করে বোঝা যায়, অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কারণ তার পেটে কোনও ভাবে চাপ পড়লেই খাদ্যনালি ওই ফুটো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছিল। রক্তপাতের পরিমাণও বাড়ছিল। তিনি বলেন, ‘‘এমন চলতে থাকলে এক সময়ে শিশুটির প্রাণ সংশয় দেখা দিত। তাই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’
এর পরে গত ৫ জুলাই পিজিতে ভর্তি করা হয় অরবিন্দকে। তার অস্ত্রোপচারের জন্য রুচিরেন্দুবাবু-সহ শিশু শল্য চিকিৎসক শিবশঙ্কর বর্মণ, পূর্ণেন্দু দত্ত, অনির্বাণ দাস, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক মোহনচন্দ্র মণ্ডল এবং অন্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়। সম্প্রতি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে শিশুটির অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুটির পেট কেটে খাদ্যনালিটি যথাস্থানে বসানো হয়। এর পরে সাধারণ মানুষের পায়ুদ্বার যেখানে থাকে, সেই পর্যন্ত খাদ্যনালির একটি অংশকে নিয়ে গিয়ে নতুন পায়ুদ্বার তৈরি করা হয়। রুচিরেন্দুবাবু বলছেন, ‘‘সাধারণত জন্মগত ভাবে পায়ুদ্বার তৈরি না হলে সেটি প্রস্রাবের জায়গার সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা অনেক উপরে ছিল এবং মূত্রথলির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই পেটে কেটেই নতুন পায়ুদ্বার তৈরি করতে হয়েছে। এটিকে বিরল ঘটনা বলা যায়।’’ পাশাপাশি অরবিন্দের পেটের ডান দিকে একটি ফুটো করে অস্থায়ী একটি পায়ুদ্বার তৈরি করা হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখনই নতুন পায়ুদ্বার দিয়ে মল ত্যাগ করলে, জায়গাটিতে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই অস্থায়ী পায়ুদ্বার করা হয়েছে। মাস ছয়েক পরে পুনরায় আর একটি অস্ত্রোপচার করে ওই অস্থায়ী পায়ুদ্বার বন্ধ করা হবে। রুচিরেন্দুবাবু বলেন, ‘‘শিশুটি স্বাভাবিক ভাবেই খাওয়াদাওয়া করছে। তাতে আগামী ছ’মাসে ওর ওজন বাড়বে। শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে ওই অস্থায়ী ফুটোটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’