Sovon Chatterjee

চোখে জল, শোভনকে জড়িয়ে ধরে মেয়ে বলল ‘বাবা বাড়ি চলো’

গত এক বছর ধরে বাবা-মেয়ের কথা নেই। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও নানা কারণে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছতে পারেননি ছেলেমেয়েরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:০০
Share:

তখন সুখের সময়। বাবার সঙ্গে সুহানি। —ফাইল চিত্র।

প্রায় এক বছর কথা হয়নি বাবা-মেয়ের। এক বাড়িতে থাকেন না আর। ফোন নম্বর চলে গিয়েছে ব্লক লিস্টে। মঙ্গলবার তাই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলার এজলাসে পৌঁছে গেল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সুহানি। উত্তপ্ত শুনানি শেষে বাবাকে জড়িয়ে প্রথমে কাঁদল মেয়ে। তার পর অনুরোধ করল, তার বাবা যেন ফিরে আসেন বাড়িতে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন, এমন কোনও আশ্বাস অবশ্য শোভন দিতে পারেননি মেয়েকে।

Advertisement

বিবাহ বিচ্ছেদ মামলাকে কেন্দ্র করে শোভন-রত্নার মধ্যে তিক্ততা সম্প্রতি চরমে। হাইপ্রোফাইল দাম্পত্য কলহের ঝড় আছড়ে পড়েছে রাজ্যের মন্ত্রিসভায় তথা রাজ্যের শাসক দলের একেবারে শীর্ষ মহলে। আলিপুর কোর্টে এ দিন বিচ্ছেদ মামলার শুনানিও স্বাভাবিক ভাবেই অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এ দিন প্রবল ভাবে সরব হন শোভনের কৌঁসুলি। স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টা সরব হন রত্নার আইনজীবীও।

শোভন এবং রত্না তো বটেই, এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন তাঁদের ছেলে এবং মেয়েও। মেয়ে সুহানি কিছু মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং তার মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং চলছে বলে এ দিন আদালতকে জানানো হয়। বাবার সঙ্গে মেয়ের কথা হওয়া জরুরি বলে কাউন্সেলর পরামর্শ দিয়েছেন, এমনও জানানো হয় আদালতকে। মেয়ে সুহানি বাবা শোভনের সঙ্গে কথা বলবে, এ বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিক— রত্নার তরফ থেকে এ দিন এমনই আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালাত জানায়, বাবার সঙ্গে মেয়ে কথা বলতেই পারে, তার জন্য নির্দেশের কোনও প্রয়োজন নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: মেয়ের পড়ার জন্য মাসে ৪০ হাজার দিতে হবে শোভনকে, নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত

শুনানি শেষ হওয়ার পর এজলাসের মধ্যেই শোভনের সঙ্গে কথা হয় মেয়ে সুহানির। প্রথমেই শোভনকে জড়িয়ে ধরে সুহানি, আবেগে কেঁদেও ফেলে নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার পরে বাবা-মেয়ের কথোপকথন শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শোভনকে বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করে সুহানি। কিন্তু শোভন জানান, তিনি বাড়ি ফিরবেন না। শোভনের অভিযোগ, বাড়িতে রত্না ‘নোংরামি’ করছেন। যে যুবকের সঙ্গে রত্নার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে শোভনের দাবি, সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে অবাধ যাতায়াত ছিল বাড়িতে, সুহানি তা জানত কি না, এ দিন মেয়েকে সে কথা জিজ্ঞাসা করেন শোভন। সুহানি জানায়, সে জানত। তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি? মেয়েকে প্রশ্ন করেন শোভন। অভিজিতের সঙ্গে রত্না হায়দরাবাদ গিয়েছিলেন, বিদেশে গিয়েছিলেন— এ সবও কেন একবারও তাঁকে জানতে দেওয়া হয়নি? শোভন এমন প্রশ্নও করেন বলে খবর। আবেগবিহ্বল মেয়ে অকপটে বাবাকে জানায়, তার পক্ষে সম্পর্কের ওই সব জটিলতার আভাস পাওয়া সম্ভব ছিল না।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

স্কুলে না গিয়ে সুহানি আদালতে হাজির হয়েছে দেখে তিনি যে খুশি হননি, তা-ও এ দিন শোভন চট্টোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন। রত্নার পরামর্শ মেনে আদালতে একটি বিশেষ পরিস্থিতির জন্ম দিতে আসা সুহানির উচিত হয়নি— এমনই ইঙ্গিত ছিল শোভনের। রত্না তাকে সুশিক্ষা দিচ্ছেন না এবং রত্নার পরামর্শ মেনে সুহানিরা যে ভাবে মাঝ রাতে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেছিল, তা মোটেই উচিত হয়নি— শোভন এমনও বলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: খড়দহে সাত মাসের মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন ইঞ্জিনিয়ার

দীর্ঘ বিরতির পর বাবা-মেয়ের আলাপচারিতা। ফলে বাবার গলায় অনুযোগের সুর কথোপকথন থামিয়ে দিতে পারেনি। শোভন এখন যেখানে থাকেন, সেখানে কেন তাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না, কেন শোভন তার ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছেন— একরাশ অভিমান নিয়ে সুহানি এ দিন প্রশ্ন করে বাবাকে। খবর শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত সূত্রের। শোভন নিজের মতো করে সে সবের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। মা ঠিক পথ দেখাচ্ছেন না— অভিমানী মেয়েকে এমনও বলেন বাবা। জানাচ্ছেন শোভন ঘনিষ্ঠরা।

বাবার সঙ্গে মিনিট দশেকের কথোপকথনে সুহানি এ দিন শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঈষৎ আক্রমণ করে বলে জানা গিয়েছে। শোভনের ক্ষতি করে দিচ্ছেন বৈশাখী— সুহানির মন্তব্যে এমনই ইঙ্গিত ছিল বলে খবর। শোভন সে কথা মানতে চাননি। ওই রকম মন্তব্য তিনি আশা করেননি— সুহানিকে শোভন এমনই বলেন বলে জানা গিয়েছে। মেয়েকে শোভন আরও বলেন, রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁর যতটা ক্ষতি করেছেন, ততটা আর কেউ পারবেন না। জানাচ্ছেন শোভন ঘনিষ্ঠরা।

আদালত থেকে বেরনোর আগে সুহানি ফের বাবাকে বাড়ি ফেরার অনুরোধ জানায় বলে খবর। কিন্তু শোভন বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরতে পারি, যদি তোমার মা এই সব নোংরামি ছেড়ে ভদ্র ভাবে ডিভোর্স দিয়ে ওই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান।’’

রত্না নিজেও এ দিন শোভনের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর। কিন্তু শোভনের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ঘেঁষতে দেননি। তা নিয়ে রক্ষীদের সঙ্গে রত্নার কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। বাবা-মেয়ের কথোপকথন শেষে অবশ্য রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলেও চলবে। উনি যেন সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।” আর শোভন এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সন্তানদের ভাল চাই, চাই মানুষের মতো মানুষ হোক। কিন্তু ওদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”

(শহরের সেরা খবর, শহরের ব্রেকিং নিউজজানতে এবং নিজেদের আপডেটেড রাখতে আমাদের কলকাতা বিভাগ পড়ুন।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement