প্রতীকী ছবি।
অপহৃত এক ব্যক্তিকে মালদহ থেকে উদ্ধার করল সোনারপুর থানার পুলিশ। তাঁর নাম অশোক রায়। বাড়ি সোনারপুরের সাহেবপাড়া এলাকায়। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অশোককে বুধবার মালদহের ইংরেজবাজার থানা এলাকার রথতলা থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খান। গ্রেফতার হয়েছে অপহরণ চক্রের দুই পাণ্ডাও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ৬ জুলাই রাতে বন্ধু বিশ্বজিৎ রাওকে নিয়ে মালদহ গিয়েছিলেন অশোক। তাঁর এক প্রাক্তন সহকর্মী সস্তায় তাঁদের গয়নার পাথর কিনে দেবেন বলে মালদহ স্টেশনে ডেকেছিলেন। সেই মতো পরদিন, ৭ জুলাই বিশ্বজিৎকে নিয়ে মালদহ স্টেশনে পৌঁছন অশোক। কিন্তু গিয়ে শোনেন, প্রাক্তন ওই সহকর্মীর একটি দুর্ঘটনা ঘটায় তিনি আসতে পারবেন না। তখন দুই বন্ধু ঠিক করেন, ভাল আম কিনে কলকাতা ফিরে আসবেন।
তদন্তকারীদের অশোক জানিয়েছেন, স্টেশন থেকে কিছু দূর এগিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি গাড়িতে কয়েক জন বসে আছে। তারা অশোক ও বিশ্বজিৎকে গাড়িতে উঠতে বলে। এ-ও জানায়, মিনিট পাঁচেক এগোলেই ভাল আম পাওয়া যাবে। ওই ব্যক্তিদের বিশ্বাস করে গাড়িতে বসেন অশোক ও বিশ্বজিৎ। কিন্তু পাঁচ মিনিট নয়, বেশ কিছু ক্ষণ একটানা গাড়ি চলায় সন্দেহ হয় তাঁদের। ঘণ্টাখানেক পরে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে অশোক ও বিশ্বজিৎকে নামিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাঁদের পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ওই অবস্থাতেই দু’জনকে রেখে চম্পট দেয় ওই ব্যক্তিরা। হাত বাঁধা অবস্থায় খোলা আকাশের নীচে, বৃষ্টির মধ্যে রাত কাটাতে বাধ্য হন অশোক ও বিশ্বজিৎ। পরের দিন দড়ি ছিঁড়ে কোনও রকমে বিশ্বজিৎ পালাতে পারলেও অশোক পারেননি। তাঁকে একটি বাড়িতে এনে তোলে অপহরণকারীরা।
তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, ৭ তারিখ রাতেই অশোকের স্ত্রী অর্চনাকে ফোন করে আট লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরের দিন সোনারপুর থানায় পুরো বিষয়টি জানান ওই মহিলা। এর পরেই অপহরণকারীদের মোবাইল ফোনের টাওয়ারের অবস্থান দেখে ইংরেজবাজার থানার পুলিশের একটি দলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর অর্চনাকে বলা হয় অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। ১০ জুলাই একটি ব্যাগে কিছু কাগজ ভরে অর্চনাকে নিয়ে মালদহ রওনা হন সোনারপুর থানার দুই পুলিশকর্মী। মালদহ স্টেশনে নেমে অর্চনা ফোনে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা তাঁকে স্টেশনের বাইরে একটি টোটোয় বসতে বলে। ইতিমধ্যে স্টেশন চত্বর এবং আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে ইংরেজবাজার ও সোনারপুর থানার সাদা পোশাকের পুলিশ।
অপহরণকারীরা এর পরে অর্চনাকে টোটোয় চাপিয়ে রওনা দেয়। পিছু নেন পুলিশকর্মীরা। রথতলায় একটি বাড়ির সামনে গিয়ে থামে টোটো। চার জন অশোককে নিয়ে বাইরে আসে। তখনই পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলে উদ্ধার করে ওই ব্যক্তিকে। গ্রেফতার করা হয় ইশারউদ্দিন শেখ ও বিল্লাল শেখ নামে দুই অপহরণকারীকে। তবে আর এক জনকে ধরা যায়নি।
জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, ইশারউদ্দিন ও বিলাল একটি অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত। মাস দু’য়েক আগে বারাসত ও ব্যারাকপুর থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল তারা। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, মুক্তিপণ নিয়ে ওই দু’জনকে তারা ছেড়ে দেয়।