অভিনব: পথে চলেছে এমনই রিকশা। ছবি: অরুণ লোধ
সৌর শক্তিচালিত রিকশা। অবাক লাগলেও এমনটাই রয়েছে এ শহরে। যদিও এই রিকশার সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা। তাই এখনই বিরাট বদল না বুঝলেও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সৌর শক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা গবেষকেরা।
বাঁশদ্রোণির পূর্ব আনন্দপল্লির বাসিন্দা শ্যামল সিংহ। বছর আটান্নের এই প্রৌঢ় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিকশা টানছেন। নানা শারীরিক সমস্যার কারণে প্যাডেল করতে কষ্ট হওয়ায় প্রায় দু’বছর আগে মোটরচালিত করে নেন নিজের রিকশাটি। এমন তো এ শহরের বহু রিকশাই এখন মোটরচালিত। সে খবরে কোনও নতুনত্ব নেই। শ্যামলবাবু জানান, ভাড়া বাড়ির কারণে বিদ্যুতের সাহায্যে মোটর চার্জ করতে সমস্যা হচ্ছিল। আর তা থেকে বেরিয়ে আসতেই সৌর শক্তির ভাবনা।
সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা, নেতাজিনগর থেকে গল্ফগ্রিন এবং টালিগঞ্জ ট্রামডিপো পর্যন্ত ছোটে এই সৌর রিকশা। মাঝে ঘণ্টা দুয়েকের বিরতি। দৈনিক প্রায় ৪৫০ টাকা রোজগার হয়। উৎসবের দিনে আয়ের পরিমাণ আরও কিছুটা বেশি। বৃষ্টি হলে অবশ্য আয় বেশ কমে যায়। আগে রোজ দেড়শো থেকে দুশো টাকা রোজগার হত বলে জানাচ্ছেন শ্যামলবাবু।
সৌর শক্তির সাহায্যে কী ভাবে মিলছে সমাধান?
শ্যামলবাবু বলেন, “কম টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকি। মোটরের জন্য বিদ্যুতে চার্জ দিতে হত প্রায় দশ-বারো ঘণ্টা। বাড়ির মালিক তা দিতে চাইতেন না। এ নিয়ে নিত্য অশান্তি হত। এখন বেশি পরিশ্রম করতে পারি না। অথচ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। তাই খরচ বেশি হলেও এমনটা করে নিলাম।
মোটর আর সৌর প্যানেলের সমন্বয়ের এই রিকশার জন্য খরচ পড়েছে আশি হাজারেরও বেশি। তাই চারটি ব্যাটারির প্রয়োজন থাকলেও লাগাতে পারেননি শ্যামলবাবু। আপাতত দু’টি ব্যাটারির সাহায্যেই সৌর শক্তিতে চলছে রিকশা। বর্তমানে ঘাটতি মেটাতে পাঁচ ঘণ্টার মতো বিদ্যুতের চার্জ দিতে হচ্ছে। অন্য রিকশাচালকদের একাংশ অবশ্য শ্যামলবাবুর পথে হাঁটতে এখনই সাহস পাচ্ছেন না। আদত পটনার বাসিন্দা মধু যাদব নামে এক রিকশাচালকের মতে, ‘‘একে তো অনেকটা খরচ। তার উপরে রিকশা তো নিজের বাড়িতে না রাখার ফলে ব্যাটারি চুরি হওয়ার ভয় ষোলো আনা।’’
সব শুনে অপ্রচলিত শক্তি বিশারদ শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থা তো খুবই ভাল। তবে রিকশা আয়তনে ছোট হওয়ায় পুরো সময় সৌর শক্তির সাহায্যে চালাতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। ইতিমধ্যেই আমরা খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলক ভাবে সৌর শক্তি চার্জিং স্টেশন করেছি। সেটা অবশ্য সৌর শক্তিচালিত সাইকেলের জন্য। এ শহরেও জায়গায় জায়গায় এমন চার্জিং স্টেশন করার চিন্তা একে বারে প্রাথমিক স্তরে। তেমনটা হয়ে গেলে আশা করব আরও অনেক বেশি সৌর শক্তিচালিত রিকশা পথে নামবে।’’
এ দিকে আকাশে মেঘ দেখলে শ্যামলবাবুরও মনে মেঘ জমে। রাস্তায় জল জমলে যে রিকশা বার করা যাবে না। কারণ মোটর তো থাকে রিকশার নীচের অংশে, সেখানে জল ঢুকলে গাড়ি বসে যাওয়ার ভয় থাকে!