বিজয়গড় বিদ্যাপীঠের ছাদে বসেছে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল। বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
তাপবিদ্যুতের পরিবর্তে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই বিল কমিয়ে ফেলেছে বেশ কিছু স্কুল।
সূত্রের খবর, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে এমনিতেই সারা বছর আর্থিক টানাপড়েন চলে। অনেক সময় স্কুলগুলি প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিলও মেটাতে পারে না। এমতাবস্থায়, রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুলে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর সেই প্রস্তাবেই এগিয়ে আসে বহু স্কুল।
রাজ্যের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা করা শুরু করে অপ্রচলিত শক্তিও মন্ত্রকও। সেই উদ্যোগেই সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যেই ১০০টির বেশি স্কুলে সৌর প্যানেল লাগানো হয়ে গিয়েছে। আরও ২০০টি স্কুলকে চিহ্নিত করে সম্প্রতি সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে গত এক-দেড় বছর ধরেই কলকাতা ও আশপাশের জেলার স্কুলগুলির মধ্যে তাপবিদ্যুতের পরিবর্তে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে আগ্রহও অনেক বেড়ে যায়।
গত দেড় বছরের মধ্যে রাজ্যের যে ১০০টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে সৌর প্যানেল লাগানো হয়েছে, তার মধ্যে বিজয়গড় বিদ্যাপীঠ, যাদবপুর সম্মিলীত বালিকা বিদ্যালয় অন্যতম। সৌর প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯০ শতাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে স্কুলের প্রয়োজনে। সরকারি নিয়মানুযায়ী, তাপবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে মোট প্রয়োজনের ১০ শতাংশ মাত্র। এত কম পরিমাণে তাপবিদ্যুৎ ব্যবহার করায় স্কুলগুলির বিদ্যুৎ বিল যেমন উল্লেখ্য হারে কমে গিয়েছে, তেমনই ছুটির সময় স্কুলের অব্যবহৃত সৌর বিদ্যুৎ রাজ্যের গ্রিডে দেওয়ায় তার দামও বিল থেকে বাদ যাচ্ছে। এতেই ভাল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে বিজয়গড়, যাদবপুর সম্মিলিত বালিকা বিদ্যালয়ের মতো স্কুলগুলির।
বিজয়গড় বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি কুণ্ডু জানিয়েছেন, এতে এক দিকে যেমন বিদ্যুৎ বিলের টাকা অনেকটা বেঁচে যাচ্ছে, পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহারের দিকটাও ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা যাচ্ছে। যাদবপুর সম্মিলিত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল লাগানো হয়েছে। সরকারকে বলেছি উৎপাদন ক্ষমতা আরও খানিকটা বাড়াতে। যাতে আমরা অনেক বেশি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি।’’
কী ভাবে স্কুলের সৌর বিদ্যুৎ রাজ্যের গ্রিডে যাচ্ছে?
সাধারণত ১০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প গড়তে ৮ লক্ষ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। প্রকল্প শেষে স্কুলের লাইনের সঙ্গে একটি ‘নেট মিটার’ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই মিটারটির মাধ্যমে যেমন গ্রিডের তাপবিদ্যুৎ স্কুলে আসতে পারবে তেমনই স্কুলের উদ্বৃত্ত সৌর বিদ্যুৎ গ্রিডেও যেতে পারবে। প্রতি মাসে স্কুল কত ইউনিট সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করল আর কতখানি তাপবিদ্যুৎ ব্যবহার করল এই মিটারটি তার হিসেব করে মোট বিলের অঙ্ক জানিয়ে দেবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে সরকারি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পরিবেশবান্ধব শক্তি উন্নয়ন নিগম স্কুলগুলিতে সৌর প্যানেল লাগানোর কাজ করেছিল। নতুন যে ২০০টি স্কুলে এই প্রকল্প হবে তার কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সূত্রের খবর, বেসরকারি সংস্থা বাছাই করে বণ্টন সংস্থার তত্ত্বাবধানেই কাজ শুরু হয়েছে। ৫-১০ কিলোওয়াট করে সৌর প্যানেল লাগানো হচ্ছে। প্রয়োজনে উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।