প্রতীকী ছবি।
স্পিড পোস্টে একটি বাক্স এসে পৌঁছেছিল দমদমের রেল পুলিশ থানায়। প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূর থেকে। পুলিশকর্মীরা বাক্স খুলে দেখেন, তাতে রয়েছে একটি ব্যবহার করা মোবাইল। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, মোবাইলটি চুরি হয়েছিল দমদম রেল পুলিশের এলাকা থেকে। তদন্তে নেমে জানা গিয়েছিল, চুরি যাওয়া ফোনটি ব্যবহার করা হচ্ছে আন্দামানে। যিনি ওই ফোন ব্যবহার করছিলেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রেল পুলিশের অফিসারেরা। এর পরেই স্পিড পোস্টে তা চলে আসে থানায়। রেল পুলিশ সেটি পৌঁছে দেয় ফোনের আসল মালিক, দমদমের চিকিৎসক বিশ্বকুমার সাহার কাছে।
রেল পুলিশ জানাচ্ছে, শুধু আন্দামান নয়, গত সপ্তাহে আমদাবাদ থেকেও স্পিড পোস্টে ফিরে এসেছে নবকুমার ঘোষ নামে এক ব্যক্তির চুরি যাওয়া মোবাইল। ওই ফোনটি গত জানুয়ারিতে চুরি হয়েছিল। একই ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের অবন্তীপুরা, বেঙ্গালুরু এবং প্রতিবেশী দেশ নেপালের বিরাট নগর থেকেও ফিরে এসেছে চুরি যাওয়া একাধিক মোবাইল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিয়ালদহ রেল পুলিশ এলাকায় একটি মোবাইল চুরি চক্র সক্রিয়। সেখানে প্রতিদিনই গড়ে দুই থেকে তিনটি মোবাইল চুরি যায়। শিয়ালদহ থেকে দমদম এবং শিয়ালদহ থেকে সোনারপুর— এই দুই শাখাতেই সব চেয়ে বেশি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। রেল পুলিশের দাবি, চোরাই মোবাইল উদ্ধারে জোর দিচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা। সেই কারণেই চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। গত বছরে এই সংখ্যাটা ছিল এগারোশোর একটু বেশি। দমদম এবং সোনারপুর রেল পুলিশ থানা গত দু’মাসে দু’শোরও বেশি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছে। যা রেল পুলিশ এলাকার নিরিখে সব চেয়ে বেশি। তবে উদ্ধার না হওয়া ফোনের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলেই সূত্রের দাবি।
চোরাই মোবাইল বিভিন্ন রাজ্য থেকে উদ্ধার হলেও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ফোন চুরির পিছনে শিয়ালদহের পাশাপাশি মালদহের কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগরের একটি চক্রও সক্রিয়। ওই দুই এলাকা জাল নোট পাচারের জন্য সারা ভারতে কুখ্যাত।
তারই সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে মোবাইল চুরির একের পর এক ঘটনা। এক তদন্তকারী জানান, ওই দুই থানা এলাকা থেকে প্রতি মাসে গড়ে আট থেকে দশটি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোরাই মোবাইল যাঁরা কেনেন, পুলিশ তাঁদের চিহ্নিত করে ফেললে তাঁরা নিজেরাই ওই ফোন থানায় জমা দিয়ে যান। কয়েক জন আবার কুরিয়রের মাধ্যমেও ফোন ফেরত পাঠান।
মোবাইল ফোন চুরি গেলে কী ভাবে তার খোঁজ পান তদন্তকারীরা?
পুলিশ জানায়, চুরি যাওয়া মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ধরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। ব্যবহার করা হলে কোন সিম বা কে সেটি ব্যবহার করছেন, তার খোঁজ করা হয়। এর পরে যিনি ওই ফোনটি ব্যবহার করছেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি ফেরত দিতে বলা হয় বা পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে তা উদ্ধার করে। তবে পুলিশের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোরাই মোবাইল কেনার পরে ক্রেতারাই বিপদে পড়ে যাচ্ছেন।