Jadavpur University Student Death

সেই রাতে কি বিবস্ত্র করে ঘোরানো হয়েছিল মৃত ছাত্রকে? যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার আরও ছ’জন

তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত ছ’জনের মধ্যে তিন প্রাক্তনী ঘটনার পর হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বুধবার ওই ছ’জনকে আলিপুর আদালতে হাজির করিয়ে পুলিশ ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৩ ২৩:১৯
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হলেন আরও ছ’জন। আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী এবং দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ আর দীপশেখর দত্ত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই ছ’জনের নাম উঠে এসেছিল। এর পর মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে এই ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাকিরা, অর্থাৎ জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) এখনও পড়াশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ধৃত ছ’জনের মধ্যে ওই তিন প্রাক্তনী ঘটনার পর হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বুধবার ওই ছ’জনকে আলিপুর আদালতে হাজির করিয়ে পুলিশ ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত যদিও ১২ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে। পরে সরকারি আইনজীবী শুভাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের বয়ান খতিয়ে দেখার পর এই ছ’জনের নাম উঠে এসেছে। ঘটনায় এঁরা যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এঁদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। এই ক’দিনে তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। পুলিশ ভাল কাজ করছে। আশা করছি, যাঁরা দোষী, শীঘ্রই তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।’’

গত বুধবার অর্থাৎ ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের (স্নাতক) এক ছাত্র। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাত ৯টা থেকে ১১টা ৪৫-এর মধ্যে কী কী ঘটেছিল, প্রাথমিক তদন্তের পর তার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পড়ুয়ার বয়ান সংগ্রহ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত হস্টেলের এ-২ ব্লকের ১০৪ নম্বর ঘরে। রাত ৯টার পর প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে চার তলায় ১০৪ নম্বর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন হস্টেলের আবাসিক সৌরভ, সপ্তক এবং মনোতোষ। ওই ঘরে মনোতোষই থাকতেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একটি সূত্রের দাবি, পড়ুয়া মৃত্যুর তদন্তে নেমে হস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় লেখা যে চিঠির কথা প্রকাশ্যে এসেছিল, তা ওই ঘরে বসেই লেখা হয়েছে। চিঠি লেখা হয়ে গেলে প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে আবার নীচে নামানো হয়। এর পর শুরু হয় ‘ইন্ট্রো’ বা পরিচয় পর্ব। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, পরিচয় পর্বের সময়েই প্রথম বর্ষের ওই নবাগত ছাত্র ‘বিবস্ত্র’ হয়েছিলেন। হতে পারে, তাঁকে বিবস্ত্র হতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের ওই অংশের।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই দিন রাত ১০টা ৫ নাগাদ ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে হস্টেলের এক পড়ুয়া ফোন করেছিলেন। রজত দাবি করেছেন, তিনি ওই ফোন পাওয়ার পর হস্টেলের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সুপার হস্টেলের নীচ থেকে ঘুরে চলে যান। এই সময়ের মধ্যে আর এক পড়ুয়া মহম্মদ আরিফের ফোন থেকে নবাগত পড়ুয়ার বাড়িতে ফোন করা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এর পর রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ তিনতলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে যান ওই ছাত্র। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ধৃত এবং অন্য পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যা জানতে পেরেছে, সে সব কিছুর যোগসূত্র মিলিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে এখনও কিছু বলা হয়নি।

তদন্তকারীদের একটি অংশ মনে করছেন, গোটা ঘটনার সঙ্গে ‘রহস্যময়’ ওই চিঠিরও সরাসরি সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। পুলিশের দাবি, ডিন অফ স্টুডেন্টস-এর উদ্দেশে লেখা সেই চিঠির ব্যাপারে ধৃতদের জেরা করা হয়। সেই জেরায় দীপশেখর স্বীকার করেছেন, চিঠিটি তাঁর লেখা। প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া নিজে লিখতে পারছিলেন না বলেই তাঁকে লিখে দিতে বলেছিলেন। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে পরে বাকিদেরও জেরা করে জানা গিয়েছে যে, সৌরভ এবং সপ্তকের মাথাতেই চিঠি লেখানোর পরিকল্পনা এসেছিল। চিঠির পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। মৃত পড়ুয়ার হাতের লেখা এবং সই রয়েছে, এমন বেশ কিছু খাতা, ডায়েরি এবং নথি ভাল করে খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা চলছে, চিঠিটির হাতের লেখা এবং সই কার? পুলিশ সূত্রে খবর, হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে। দীপশেখরের হাতের লেখাও পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, যদি তা ওই পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাঁকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে।

যা বলছে সুমনের পরিবার

পড়াশোনার সূত্রে কলেজজীবন থেকেই বাইরে থাকতেন সুমন নস্কর। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানার আট মসিপুরে। হটুগঞ্জ হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভবিচ্ছেদ কলেজে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার পর দর্শনশাস্ত্র নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে লেখাপড়া করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাড়ি এলেই ভাইবোনদের সঙ্গে আড্ডা মারেন, খুনসুটি করেন। সেই ছেলে কাউকে র‌্যাগিং করতে পারেন, এবং সে জন্য কারও মৃত্যু হতে পারে, এটা বিশ্বাসই করতে পারেন না যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সুমন নস্করের বাবা জগদীশ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের যৌথ পরিবার। বাড়িতে এতগুলো ছেলেমেয়ে। সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক সুমনের। ভাইবোনকে কী ভালবাসে! সেই ছেলে র‌্যাগিং করতে পারে, এটা বিশ্বাস করি না।’’ সুমনের বাবা পেশায় গৃহশিক্ষক। দিদি মাধবপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেকে বেশ কয়েক বছর ধরে মন্দিরবাজার থানার মাধবপুর এলাকায় ভাড়াবাড়িতে রেখেছিলেন জগদীশ। স্ত্রীর সঙ্গে জগদীশও সেখানে থাকেন। জগদীশ বলেন, ‘‘পুলিশ এল। বাড়ির দরজা খুলতে বলল। আমি এবং আমার স্ত্রী দরজা খুলে দিলাম। আমাকে নাম জিজ্ঞেস করল পুলিশ। তার পর ছেলের নাম জিজ্ঞেস করে বলল, ‘সে কই?’ আমি দেখিয়ে দিলাম, ‘ও ঘরে আছে।” ঘটনার বিবরণ দিয়ে জগদীশ বলেন, ‘‘আমি ডাক দিলাম, ‘বাবু আয়, পুলিশ এসেছে।’ এর পরে ও এল। পুলিশ আধার কার্ড দেখল। আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যর, কিসের ভিত্তিতে আমার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন?’ পুলিশ বলল, ‘দেখুন, বেশি কিছু নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দুর্ঘটনা হয়েছে। তার জন্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যাচ্ছি। অ্যারেস্ট করছি না। সন্ধ্যার দিকে খোঁজ নেবেন। আপনার ফোন নম্বর দিন। আইনি কিছু পদক্ষেপ করলে আপনাকে জানানো হবে।’’ তবে বাবার দাবি, ঘটনার সময় ছেলে হস্টেলে ছিলেন না। কোচিং ক্লাসে গিয়েছিলেন।

যা বলছে অসিতের পরিবার

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পাশও করে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি হস্টেলে থাকতেন। তাঁর পরিবার বলছে, পড়াশোনার জন্যই সেখানে ছিলেন। বুধবার ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে অসিতের মা সুমিত্রা সর্দার বলেন, ‘‘বাড়িতে কয়েক দিন ছিল। কী একটা বই হারিয়ে গিয়েছে বলল। ওই সব জমা দিতে কলকাতা গিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর (ছাত্রমৃত্যু) বাড়ি চলে এসেছিল। ওখানে নাকি থাকতে দেয়নি বলল।’’ তিনি আরও জানান, এর পরে আবার অসিত কলকাতা এসেছিলেন। তার পর আবার মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফেরেন তিনি। জানান, তাঁকে যাদবপুর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার যেতে হবে। এই বলে রাতেই ঘুম থেকে উঠে চলে যান কলকাতা। তার পরেই ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়েছেন তিনি। হস্টেলের কোনও ঘটনা, কোনও গল্প অসিত বাড়িতে করতেন না বলে দাবি তাঁর মায়ের। তবে তাঁর ছেলে র‌্যাগিং করতে পারে— এটা ভাবতেই পারেন না অসিতের মা। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘ও এমন কিছু করতেই পারে না। আমার ছেলে জড়িত নেই ও সবে। আমার ছেলে নির্দোষ।’’ সে দিনের ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন অসিত? সুমিত্রার কথায়, ‘‘ছেলে বলল, ওরা তখন রুমে (হস্টেলের ঘরে) ছিল। ও কিচ্ছু জানে না বলল।’’

যা বলছে আসিফের পরিবার

যাদবপুরের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া মহম্মদ আসিফ আনসারি । বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের উত্তর আসানসোলে রেলপাড় কেটি রোডে। আসিফের বাবা আফজল কাপড় ফেরি করেন। মা ইসরত গৃহবধূ। টালির চাল দেওয়া ঘরে বসে আফজল বলেন, ‘‘বাড়িতে খুব অনটন। আমাদের তিন ছেলে এবং এক মেয়ে। আসিফ আমাদের বড় ছেলে। ওকে নিয়েই পরিবারের যত স্বপ্ন।’’ কিন্তু ছেলের গ্রেফতারি আনসারি দম্পতির কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আসিফের বাবা-মা জানান, ঘটনার দু’দিন পর আসানসোলের বাড়িতে এসেছিল তাঁদের ছেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন করে তাঁকে একাধিক বার ডাকা হয়। তাই বাড়ি এসে দু’দিন পরেই কলকাতা চলে যান। মায়ের কথায়, ‘‘ছেলে জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে ও কোনও ভাবে যুক্ত নয়।’’ তবে মৃত ছাত্রকে নিয়ে বাড়িতে তিনি গল্প করেছিলেন। আসিফের মায়ের কথায়, ‘‘ওই ছেলেটি যখন ভয় পেত, আমার ছেলে ওকে সাহায্য করত। বন্ধুর মতো ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ আসিফের বাবা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ছেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। তখন আসিফ জানান, তিনি পড়াশোনা করছেন। এর পর রাত দেড়টা নাগাদ তাঁরা খবর পান, আসিফ-সহ কয়েক জনকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। প্রৌঢ় আফজল স্বগতোক্তির সুরে বলতে থাকেন, ‘‘তিনটি ছেলেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করাচ্ছি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমরা ভেবে উঠতে পারছি না, কোথা থেকে কী করব।’’ পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করে এক আইনজীবীকে নিয়ে কলকাতা এসেছেন তাঁরা।

যাদবপুরে বগুলাবাসীর মিছিল

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সকলের শাস্তি দাবি করে মিছিল করলেন নদিয়ার বগুলা এলাকার কিছু তরুণ-তরুণী। মৃত প্রথম বর্ষের পড়ুয়া বগুলারই বাসিন্দা। তাঁকে ‘খুন’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিচার চেয়ে মিছিল করেন নদিয়ার ওই ছোট্ট জনপদের বাসিন্দারা। মিছিলে অংশ নেন স্থানীয় বেশ কয়েক জন গৃহশিক্ষকও। বুধবার সকাল ৮টা ৪০ নাগাদ হঠাৎ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলে কৃষ্ণনগর লোকালে ওঠেন এক দল তরুণ-তরুণী। তাঁদের হাতে ছিল প্রতিবাদী ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, কালো ব্যাচ, আর গলায় ঝোলানো ছিল মৃত পড়ুয়ার ছবি। আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে র‌্যাগিং বন্ধের দাবিতে ও বগুলার সন্তানের মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের কঠোর শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘বগুলা ছাত্র সমাজ’ বলে একটি মঞ্চ। শুধু বগুলা নয়, নদিয়ার একাধিক স্টেশন থেকে যাদবপুর অভিযানে শামিল হন ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অংশ নেন বেশ কিছু শিক্ষকও। মিছিলে অংশ নেওয়া বগুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সুভাষ নস্কর বলেন, “আর কয়েক মাস বাদেই আমরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাব। সেখানকার পরিবেশ যদি র‍্যাগিংমুক্ত না হয়, তা হলে আবার আমাদের মধ্যে থেকে কাউকে বলি হতে হবে। এর চিরস্থায়ী সমাধান চাই।” মিছিলে অংশ নেন পদার্থবিদ্যার গৃহশিক্ষক নব্যেন্দু বিশ্বাস। তিনি বলেন, “এটা কোনও ভাবেই অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তদন্ত যত এগোচ্ছে, এটা পরিষ্কার হচ্ছে যে, এটা দীর্ঘ দিনের চলে আসা একটা ব্যবস্থার ফল। প্রাতিষ্ঠানিক খুন। যারা গাফিলতির সঙ্গে যুক্ত, যারা খুনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত, প্রত্যেকের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

ধুন্ধুমার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমারকাণ্ড যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর সদস্যের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বাম ছাত্র সংগঠনগুলির সদস্যেরা। তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। টিএমসিপি-র অভিযোগ, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি, মহিলা সমর্থকদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ। যদিও বাম সংগঠনগুলি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বুধবার ৮বি বাস স্ট্যান্ডে ধর্না কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেখান থেকে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি দল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য। সেই সময় বাম ছাত্র সংগঠনগুলির ডাকে জেনারেল বডি (জিবি অর্থাৎ সাধারণ সভা)-র মিটিং চলছিল। টিএমসিপিকে ঢুকতে দেখে বাম ছাত্রসংগঠনগুলি ‘জিবি’ বন্ধ করে বেরিয়ে আসে। অরবিন্দ ভবনের সামনে দু’পক্ষের সদস্যেরা মুখোমুখি হলে তাঁদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। বচসা থেকে ধ্বস্তাধ্বস্তিও বাধে। পরে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে স্মারকলিপি জমা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু বাম সংগঠন ও এসএফআই আমাদের বাধা দিয়েছে। ওরা মুখেই শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে। আমাদের মেয়েদের হেনস্থা করা হয়েছে, শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে।’’ টিএমসিপি নেত্রী রাজন্যা হালদার বলেন, ‘‘এরা মুখে শুধু বড় বড় কথা বলে। স্মারকলিপি জমা দিতে এসে আমাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থাই করা হল। আমরা জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এরা আবার প্রগতিশলীতার কথা বলে। আমি জানি না কেন আামাদের বাধা দেওয়া হল। আমার ভাইয়ের মৃত্যু হল। ওঁরা চায় না দোষীরা সাজা পাক।’’ অন্য দিকে, ডিএসও ও এসএফআই-এর অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ক্যাম্পাসে ঢুকে অশান্তি পাকিয়েছে। তাদের দাবি, যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement