রেশন কার্ড হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কার্ডে যাঁর নাম রয়েছে, খোঁজ মেলেনি তাঁর। শুধু কলকাতাতেই এমন কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। মাস তিনেক অপেক্ষা করেও কার্ড মালিকদের খোঁজ না পেয়ে তা ফেরত পাঠানো হয় খাদ্য দফতরের কাছে চলতি বছরের গোড়ায়।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ, এর পিছনে এক শ্রেণির অসাধু রেশন ডিলারের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
কেন এমন হল?
শাসক এবং বিরোধী দলের একাধিক কাউন্সিলরের কথায়, গত বছর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। ওই বছরে ছিল বিধানসভা ভোট। মূলত শাসক দলের নেতা, কাউন্সিলর এবং বিধায়কদের উপর ভার পড়েছিল কার্ড বানানোর। এত দ্রুততার সঙ্গে তা করা হয়েছে যে বহু ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। অস্তিত্ব নেই এমন অনেক লোকের কার্ড শুধু কারও মুখের কথায় করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এর পিছনে শাসক দলের নেতা-কাউন্সিলর-বিধায়কদের কোনও ভূমিকা নেই বলে দাবি খোদ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তিনি বলেন, ‘‘শহরে প্রায় শ’খানেক অসৎ রেশন ডিলার এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নিজেদের মুনাফার কারণে ভুয়ো রেশন কার্ড বানিয়েছেন তাঁরা। সারা রাজ্যে এর সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। কলকাতায় ৬ লক্ষের কাছাকাছি।’’ তিনি জানান, ওই সব কার্ড বাতিল করতেই ফের আবার ডিজিট্যাল রেশন কার্ড –এর সমীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ভুয়ো রেশন কার্ডের চক্র বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে মন্ত্রীর আশা।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, আগে কলকাতায় রেশন কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি ছিল। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর শহর জুড়ে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড করার জন্য কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, বেছে বেছে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাসক দলের প্রতিনিধিদের। তা নিয়ে কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক, প্রকাশ উপাধ্যায় এবং বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়েরা রেশন কার্ডের প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন।
প্রকাশবাবুদের আরও অভিযোগ, আবেদন ফর্মে নামধাম, ঠিকানা লেখার কাজে গাফিলতি ছিল। শুধু মাত্র পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়ে শাসক দলেক কেউ কেউ যার-তার নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এর কারণেই পরে রেশন কার্ড বিলির সময় অনেকেরই খোঁজ মেলেনি।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি। খাদ্যমন্ত্রীর মতোই তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম আমল থেকেই জনসংখ্যার চেয়ে রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি ছিল। এক শ্রেণির অসাধু ডিলার তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই নাম গলি ফের আসাতেই সমস্যা হয়েছে। ভুয়ো নাম তো বাদ যাবেই।’’
তিনি জানান, এর পরেও অনেক ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে ভুল ছিল। ওয়ার্ডের নাম, রাস্তার নাম, বাবার নাম ঠিকমতো তোলা হয়নি। তাই ফের সমীক্ষা করা হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবু সোমবার জানিয়েছেন, ভুয়ো কার্ড রোখাই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। এটা অসাধু রেশন ডিলারদেরও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো কার্ডের সংখ্যা বাড়িয়ে বরাদ্দ রেশনের
মাল তুলে ওরা মুনাফা করত। সেই চক্রকে ভাঙাই তাদের মূল কাজ বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। তিনি হিসেব দিয়ে বলেন, প্রতি মাসে এক জন রেশন গ্রাহকের জন্য ১১০ -১২০ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল হলে সেই খরচ কমানো যাবে।