Sister Nivedita Museum

দ্বার খোলার অপেক্ষা, সেজে উঠেছে নিবেদিতা সংগ্রহশালা

পুরোপুরি প্রস্তুত ১৬ নম্বর, বোসপাড়া লেন। শহরের বুকে নিবেদিতার স্মৃতি জাগিয়ে রাখা সেই বাড়িই এ বার ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৯:৩০
Share:

সুসজ্জিত: ভগিনী নিবেদিতা সংগ্রহশালার অন্দর। নিজস্ব চিত্র

পুরোপুরি প্রস্তুত ১৬ নম্বর, বোসপাড়া লেন। শহরের বুকে নিবেদিতার স্মৃতি জাগিয়ে রাখা সেই বাড়িই এ বার ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে সপ্তাহের তিনটি দিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে বাগবাজারের ‘ভগিনী নিবেদিতা সংগ্রহশালা’।

Advertisement

গিরিশ অ্যাভিনিউ থেকে ডান দিকে বোসপাড়া লেনে ঢুকেই রয়েছে মার্গারেট এলিজ়াবেথ নোবেলের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়ি। ২০১৩ সালে ১৬, বোসপাড়া লেনের ওই বাড়িটি রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’টি উঠোন-সহ সেই বাড়িটির কিছুটা অংশ দোতলা, বাকিটা একতলা। কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি, রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী ও ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পরামর্শে ওই বাড়িটির সংরক্ষণের কাজ করেন রামকৃষ্ণ সারদা মিশন কর্তৃপক্ষ। প্রায় চার বছর ধরে কাজের পরে, নিবেদিতার জীবন ও সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী পুনরায় ছবি, মুরাল ও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সাজানো হয়েছে।

নিবেদিতার বাড়ির দায়িত্বে থাকা প্রব্রাজিকা অশেষপ্রাণা জানান, ১৫ মার্চ ওই সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হবে। সেই উপলক্ষে ওই দিন এবং ১৭ মার্চ গিরিশ মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রামকৃষ্ণ সারদা মিশন কর্তৃপক্ষ জানান, ১৭ মার্চ দিনটি নিবেদিতার জীবনে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। কারণ ১৮৯৮ সালের ওই দিনে ১০/২ বোসপাড়া লেনের একটি বাড়িতে মার্গারেটের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল মা সারদার। বহু শতাব্দীর অনুশাসন ভেঙে ওই দিন মার্গারেটের সঙ্গে খেয়েছিলেন মা সারদা। এর ফলে তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে মার্গারেটের আসা-যাওয়ার পথও খুলে যায়। পরে মার্গারেট ওই সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে লেখেন, ‘আ ডে অব ডেজ়’ (একটি দিনের মতো দিন)।

Advertisement

প্রব্রাজিকা অশেষপ্রাণা বলেন, ‘‘আগামী ২০ মার্চ প্রথম সংগ্রশালায় ঢুকতে পারবেন দর্শনার্থীরা। সপ্তাহের প্রতি শুক্র, শনি ও রবিবার খোলা থাকবে সংগ্রহশালাটি। প্রথম কয়েক মাস এমন চলার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ ওই দিনগুলিতে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা থাকবে সংগ্রহশালাটি।

বর্মা-সেগুন কাঠের পুরনো দরজা পেরিয়ে সংগ্রহশালায় ঢোকার মুখেই টিকিটের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের হাতে দেওয়া হবে একটি ‘অডিও গাইড’ যন্ত্র। হেডফোন কানে লাগিয়ে সেই যন্ত্রের বাংলা ও ইংরাজি ধারাভাষ্য মেনেই নিবেদিতার পড়ার ঘর, বারান্দা, ঠাকুর দালান, অন্দরমহল-সহ বিভিন্ন ঘর অর্থাৎ গ্যালারিতে পর্যায়ক্রমে পৌঁছতে পারবেন দর্শকেরা। প্রতিটি গ্যালারিতে ঢোকার মুখেই দেওয়ালে লাগানো কিউআর-কোডটি হাতে থাকা যন্ত্র দিয়ে স্ক্যান করলেই শোনা যাবে সেই ঘরের বৈশিষ্ট্য। আবার বেশ কয়েকটি গ্যালারিতেই ঢুকে ডিজিটাল স্ক্রিনে আঙুল ছোঁয়ালেই ফুটে উঠবে নিবেদিতার জীবন, কর্মকাণ্ডের বিবরণ-সহ স্কুল তৈরির ইতিহাস।

ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলতে প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হয়েছে এই হেরিটেজ সংগ্রহশালায়। যেমন ঠাকুরদালানের দু’দিকের মুরালের সামনে থাকা ‘ট্যাব’-এ চোখ রাখলেই জীবন্ত হয়ে উঠবে গঙ্গাপথে গিয়ে নৌকা থেকে নিবেদিতাকে মহিলাদের নিজস্ব মঠ তৈরির জন্য স্বামী বিবেকানন্দের জায়গা দেখানোর ঘটনার মতো অন্য বিষয়ও। দোতলায় নিবেদিতার শোওয়ার ঘরটি অবশ্য রাখা হয়েছে ধ্যানের জন্য। নিবেদিতা সংগ্রহশালা সূত্রের খবর, সাধারণের জন্য ৫০ টাকা ও স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের জন্য ২০ টাকার টিকিট করা হচ্ছে। একসঙ্গে কুড়ি জন ঢুকতে পারবেন সংগ্রহশালায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement