সুরেন্দ্রনাথ গ্রুপ অব কলেজের ফেস্টের প্রচারের ব্যানার টাঙানো হয়েছে কলেজের প্রবেশপথের পাশেই। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা এবং ভবিষ্যতে যে কোনও প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান নিয়ে আরও কড়া হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া। গায়ক কেকে-র মৃত্যুর পরে লালবাজারের পদক্ষেপ বলতে আপাতত এটুকুই। যদিও ওই ঘটনার পরে নানা মহল থেকে প্রশ্নের ঝড় ওঠা থেমে নেই। অনেকেরই বক্তব্য, এমন ঘটনার পরেও কেন উদ্যোক্তদের বিরুদ্ধে আরও কড়া হবে না পুলিশ? আইনজীবীদের বড় অংশ বলছেন, ‘‘কেন অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করা হবে না? এ-ও তো এক ধরনের উদাসীনতা! যা প্রমাণ করে, এর পরেও আমরা শিক্ষা নেব না।’’
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই মৃত্যুর পিছনে কোথাও অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর দায়ও থেকে যায়। সে দিন যা ঘটেছে, তাতে যে কেউ পদপিষ্ট হয়ে মারা যেতে পারতেন। কেন এমন ঘটনা ঘটানোর জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’ আর এক আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্রের প্রশ্ন, ‘‘ঘটনার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও দায় ঠেলাঠেলি বন্ধ হয়নি। এখনও পুলিশ কঠোর না হলে আগামী দিনে এমন আরও অনেক ঘটনা দেখাবাকি থাকবে।’’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার উল্টোডাঙার স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বেরোনোর পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ওরফে কেকে। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শিল্পী। তার পরেই সামনে আসতে শুরু করে উদ্যোক্তাদের তরফে গাফিলতির অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, প্রায় আড়াই হাজার আসনবিশিষ্ট নজরুল মঞ্চে থিকথিক করছে ভিড়। গরমে হাঁসফাঁস করছেন কেকে। অন্য দিকে, প্রেক্ষাগৃহেঢোকার জন্য খণ্ডযুদ্ধ চলেছে বাইরে। সেই ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে উদ্যোক্তাদের কাউকে কাউকে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র থেকে ধোঁয়া স্প্রে করতেও দেখা যায়।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, আড়াই হাজার আসনবিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার দর্শক এলেন কী ভাবে? তা হলে কি কলেজের তরফে পাস বিক্রি করা হয়েছিল? সেইপ্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রায় সাড়ে চার হাজার পাস ছাপানোর তথ্য সামনে আসায়। বিশেষত তাঁরা যেখানে জানতেন, পড়ুয়া রয়েছেন আড়াই হাজার। আর এতেই গাফিলতির বড়সড় অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষেরবিরুদ্ধে। কেন কেকে-র মানের এক শিল্পীর অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হবে না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
জানা গিয়েছে, আগামী ৮ জুন সুরেন্দ্রনাথ গ্রুপ অব কলেজের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেখানেও মুম্বইয়ের দুই শিল্পীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সরকারি সূত্রের খবর, সেই অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ওই সময়ে নেতাজি ইন্ডোরে সরকারি অনুষ্ঠান থাকার কারণে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক বলে নিজেকে দাবি করা ঋজু চক্রবর্তী নামে এক পড়ুয়া এ দিনজানালেন, তাঁরা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনও চিঠি পাননি। শুক্রবার এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।