বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র
বর্ষবরণের রাতে বালিগঞ্জ এলাকায় তরুণীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে ধৃতেরাই ২০১৭ সালে চড়াও হয়েছিল শরৎ বসু রোডের বসু বাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের থেকে নির্মাণ সামগ্রী কেনার জন্য ধৃতেরা হুমকি দিয়েছিল ওই বাড়িতে থাকা নেতাজির পরিবারের সদস্যদের।
বুধবার তরুণীর যৌন হেনস্থার ঘটনায় গ্রেফতার হয় বেলতলার ইন্দ্রজিৎ হালদার ওরফে হাবলা, শান্তনু মণ্ডল ওরফে ভাগনা, সোমনাথ পাত্র ওরফে পুটলি এবং বিশ্বনাথ পাত্র ওরফে নানু। বালিগঞ্জ থানা সূত্রে খবর, মোটরবাইকে চড়ে সেই সময় ওই যুবকেরা বসু বাড়িতে গিয়ে শিশির বসুর পরিবারকে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। বসু বাড়ির সদস্যেরা প্রতিবাদ করলে হাবলা-ভাগনারাই বলেছিল, ‘‘নেতাজিকে চিনি না। সুভাষদার বাড়ি যখন সুভাষদা’কেই ডাকুন! আপনাদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই।’’
যদিও ওই পুলিশ আধিকারিকই বলছেন, ‘‘বসু বাড়ির ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেফতার করা গেলেও হাবলা-ভাগনারা তখন ফেরার হয়ে যায়।’’
অভিযোগ, বসু বাড়ির ঘটনায় ধৃতেরাও জামিন পাওয়ার পরে ফের হাবলা, ভাগনারা এলাকায় ফিরে নতুন করে দৌরাত্ম্য শুরু করে। বৃহস্পতিবার ইন্দ্রজিৎ, শান্তনু, সোমনাথ এবং বিশ্বনাথকে আলিপুর আদালত ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দু’ সপ্তাহের পুলিশি হেফাজত হয়েছে যৌন হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্ত সুমিত পোদ্দার ও রোহিত পাসোয়ানের।
বুধবার বেলতলা রোডের পেয়ারাবাগান এলাকায় গিয়ে বোঝা গেল ভাল নামে কেউই চেনেন না হাবলা, ভাগনাদের। তবে তাদের ডাকনাম শুনে তাদের নিয়ে কথা বলতে অনীহা স্থানীয় মানুষের। তার কারণ এলাকায় তাদের দাপট। এক মহিলা শুধু বলেন, ‘‘এরাই তারা, নেতাজির বাড়িতে গিয়ে যারা ঝামেলা করেছিল। বাকিটা বুঝে নিন।!’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, হাবলা-ভাগনারা এলাকায় ভরত জেনা নামে এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে কাজ করে। ভরত নিজেকে অবশ্য তৃণমূলের নেতা বলেই পরিচয় দেন।
ধৃতদের মধ্যে ‘নামডাক’ বেশি ৩২ বছর বয়সী ইন্দ্রজিৎ ওরফে হাবলার। তার পরিবারের সদস্যেরা জানান, হাবলা নির্মাণ সামগ্রী রফতানির কাজ করে। বেশির ভাগ সময় কাটায় স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে। পুলিশের দাবি, ইন্দ্রজিৎই মত্ত অবস্থায় তরুণীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরের মূল পাণ্ডা। যদিও ইন্দ্রজিতের পরিবারের দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। বর্ষবরণের রাতে সে দেড়টার মধ্যে বাড়ি ফিরেছিল।
ধৃত শান্তনু ওরফে কুড়ি বছরের ভাগনার নির্মাণের ব্যবসা। অভিযোগ, এলাকায় নির্মাণের জন্য কোথায় কত টাকা দিতে হবে তার হিসেব শান্তনুই ঠিক করে দেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সে আবার এ সব কাজের জন্যই ভরতের ‘খাস লোক’ বলে খবর। বালিগঞ্জে আক্রান্ত তরুণী সিসি ক্যামেরায় ছবি দেখে শান্তনুকে চিহ্নিত করেন।। শান্তনুর স্ত্রীর অবশ্য দাবি, ‘‘আমার স্বামী অল্পেই মাথা গরম করে ফেলে। কিন্তু ও এমন কাজ করেনি।’’ বাকি ধৃতদের মধ্যে পুটলি এবং নানু দুই ভাই। পেয়ারাবাগান এলাকায় তারাই প্রোমোটিংয়ের মাথা। পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন পুটলি ও নানুই গাড়ি ভাঙচুর এবং তরুণীর সঙ্গীকে মারধর করে। স্থানীয়েরা এদের ঠিকানা দিতে রাজি হননি।
ধৃতদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রসঙ্গে কথা বলতে ভরত জেনাকে ফোন করা হয় বুধবার। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি কলকাতায় ছিলাম না। ওরা কী করেছে আমি জানি না। অনেকের মতো এলাকায় আমিও তৃণমূল করি।’’