— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
স্কুল শুরু হওয়ার আগে মাঠে বা খোলা জায়গায় সকালের প্রার্থনা চলাকালীন কিছু পড়ুয়ার অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এই পরিস্থিতিতে মাঠে বা খোলা জায়গার বদলে ক্লাসঘরেই প্রার্থনা চলছে বেশির ভাগ স্কুলে। কোনও কোনও স্কুলে আবার প্রার্থনা কিছু দিনের জন্য বন্ধও রাখা হয়েছে। তবু এখনও কেন শহরের বেশ কিছু স্কুল গরমের ছুটি না দিয়ে অফলাইনে ক্লাস করাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই শহরের তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। এখন তা খানিকটা কমলেও প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি রয়েছে। এই অবস্থায় স্কুলে যাতায়াত করতে গলদঘর্ম অবস্থা হচ্ছে পড়ুয়াদের। চিকিৎসকেরাও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রখর রোদ এড়িয়ে চলার। সেখানে এখনও স্কুল খুলে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, উঠছে সেই প্রশ্ন।
পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলের অধ্যক্ষ বিকাশ মণ্ডল জানান, তাঁদের স্কুলের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালের প্রার্থনা এখন বন্ধ। বিশেষ প্রার্থনা বা শারীরিক কসরতের ক্লাস স্কুলের বাতানুকূল ঘরে অথবা বদ্ধ জায়গায় হচ্ছে। স্কুলের মাঠে খেলাও আপাতত বন্ধ। মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী করও জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের কোনও কিছুই মাঠে অথবা খোলা জায়গায় করা হচ্ছে না। দেবী বলেন, “আমাদের স্কুলে প্রতিটি ক্লাসরুম বাতানুকূল। তাই গরমে পড়ুয়াদের ক্লাস করতে তেমন কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। আমাদের নির্ধারিত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ক্লাস হয়েই গরমের ছুটি হবে।’’ বাতানুকূল ক্লাসঘরে ক্লাস হচ্ছে ইন্দাস ভ্যালি ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমিতেও।
প্রতি বছর যে ভাবে তীব্র গরম পড়ছে, তা মাথায় রেখে শহরের বেশ কিছু স্কুলের ক্লাসঘর এখন বাতানুকূল করা হয়েছে। তবে বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াত করতে পড়ুয়াদের বেশ কষ্ট হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের মতে, স্কুলের বাতানুকূল ঘর থেকে বেরিয়েই তীব্র গরমের মধ্যে পড়ছে পড়ুয়ারা। ফলে ঠান্ডা-গরমের এই ফারাক তাদের শরীর নিতে পারছে না। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুলের ক্লাসঘর বাতানুকূল হলেও রোদ এড়িয়ে চলার তো কোনও উপায় নেই। উল্টে বাড়িতে এসে ঠান্ডা-গরমে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’’
স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যাল জানাচ্ছেন, তাদের স্কুলের কয়েকটি ক্লাস অনলাইনে চললেও পরীক্ষার জন্য কিছু পড়ুয়াকে স্কুলে আসতেই হচ্ছে। আপাতত গরমের মধ্যে স্কুল ছুটির আগে প্রার্থনা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভাস বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ছাতা বা টুপি ব্যবহার করতে বলছি।
জলের বোতল সঙ্গে রাখতে বলছি। পরীক্ষা শেষ হলেই গরমের ছুটি দিয়ে দেব।’’ জি ডি গোয়েন্কা পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষা সুজাতা চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রত্যেক ক্লাসঘরে সকালের প্রার্থনা হচ্ছে। ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলের মতো খেলা আপাতত বন্ধ। তবে স্কুল ছুটির সময় কমানো হয়নি। ওই স্কুলে গরমের ছুটি পড়ার কথা মে মাসের মাঝামাঝি।
দোলনা ডে স্কুলেও দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ছুটির সময়সীমা কমানো হলেও বাকি ক্লাসগুলিতে তা কমানো হয়নি বলেই জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা। তবে স্কুলের প্রার্থনা সকলে একসঙ্গে জড়ো হয়ে বাইরে হচ্ছে না, কোনও বড় হলঘরে হচ্ছে। আগে ক্যারাটে ক্লাস স্কুলের ছাদে হলেও এখন তা হচ্ছে কোনও বদ্ধ জায়গায়।
তবে সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলের রোজকার প্রার্থনা স্কুলের ক্লাসঘরে হলেও বিশেষ প্রার্থনা বাইরে কেন হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, বিশেষ প্রার্থনা বাইরে হওয়ার কারণেই সম্প্রতি দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যদিও স্কুলের অধ্যক্ষের দাবি, গরমের জন্য তারা অসুস্থ হয়নি।
এই গরমে অবশ্য সাউথ পয়েন্ট, লা মার্টিনিয়ার, লোরেটো ডে স্কুল বৌবাজার থেকে শুরু করে শহরের অধিকাংশ স্কুলে গরমের ছুটি পড়া পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস হবে। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়েছে ২২ এপ্রিল থেকে। তখন আমরা সরকারি-বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ভেদাভেদ না করে বেসরকারি স্কুলগুলিকেও ২২ এপ্রিল থেকেই গরমের ছুটি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম।’’