পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজ এবং ঐতিহ্যের প্রতি পড়ুয়াদের ভালবাসা থাকাটাও বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন কলকাতার বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই পঠনপাঠনের পাশাপাশি শিশুমনে কলকাতা শহরের প্রতি ভালবাসা এবং শহরকে জানার আগ্রহ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। এর জন্য পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাব গঠনের মতো পদক্ষেপ আগেই করেছে অনেক স্কুল। শহরের দর্শনীয় স্থান, সেগুলির ইতিহাস এবং তা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশ হওয়া বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে কর্মশালা করেছিল মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস। এই কাজে পড়ুয়াদের সরাসরি যুক্ত করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ বার স্কুলের বারান্দা জুড়ে রং-তুলির ছোঁয়ায় কলকাতা শহরের ছবি ধরে রাখতে উদ্যোগী হচ্ছে দ্য হেরিটেজ স্কুল। স্কুলের প্রিন্সিপাল সীমা সাপ্রু জানান, স্কুলের পড়ুয়াদের দিয়ে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্যশালী ভবনগুলি আঁকানো হবে। প্রথমে শিক্ষকদের সাহায্যে ওই সব জায়গা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে পড়ুয়ারা। তার পরে স্কুলের বারান্দায় সাজিয়ে রাখা হবে ছবিগুলি। এর ফলে শহরের ইতিহাস সম্পর্কে যেমন পড়ুয়ারা জানতে পারবে, তেমনই শহর এবং সমাজের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবে তারা। সীমাদেবী বলেন, ‘‘এই সব কাজে পড়ুয়ারা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকলে মানসিক বিকাশ যেমন হয়, তেমনই সমাজের প্রতি ভালবাসাও তৈরি হয়। এক জন মানুষ এবং পড়ুয়া হিসেবে যেটা খুবই প্রয়োজন। ওই কাজ অভিভাবক-সহ অন্যরাও দেখতে পারবেন।’’
মডার্ন হাইস্কুলের অধিকর্তা দেবী কর জানান, ২০১২ সালে পড়ুয়াদের নিয়ে একটি প্রদর্শনী করা হয়েছিল। সেখানে ছবির মাধ্যমে কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলি ফুটিয়ে তুলেছিল পড়ুয়ারা। তাদের নিয়ে ‘লেগ্যাসি’ নামে একটি ক্লাবও রয়েছে স্কুলে। কলকাতা, চন্দননগর এবং অন্য কয়েকটি ঐতিহাসিক জায়গায় গিয়ে সেখানকার ইতিহাস নিয়ে গবেষণাও করছেন পড়ুয়ারা। পুরনো কলকাতার কাঠের সিঁড়ি ও লোহার রেলিং সংরক্ষণের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের প্রাক্তনীদের সঙ্গে বর্তমান পড়ুয়াদের মুখোমুখি বসিয়ে আলাপ আলোচনা করানো হয়েছে। যাতে স্কুলের প্রাক্তনীদের সম্পর্কে তাঁরা জানতে পারেন। একই ভাবে স্কুল ও শহরের ইতিহাস সম্পর্কেও পড়ুয়াদের জানানো হয়।’’ ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরি বলেন, ‘‘প্রতি বছর পড়ুয়াদের নিয়ে যে শিক্ষামূলক ভ্রমণ করা হয়, সেখানেও ঐতিহাসিক স্থানগুলিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্কুলে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েও পড়ুয়াদের মধ্যে দেশ, শহর ও স্কুলের ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা হয়।’’