জোরকদমে: আশরফের কারখানায় চলছে পিপিই তৈরি। নিজস্ব চিত্র
কারখানায় স্কুলের পোশাক তৈরি করতেন তিনি। লকডাউনের কারণে এখন সে সব কিছুই বন্ধ। তবে পেশায় দর্জি, মহেশতলার হাজি আশরফ আলির এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কারণ, মহেশতলার ডাকঘর এলাকার হাজারখানেক শ্রমিককে দিয়ে দিনে প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই তৈরি করছেন তিনি।
মহেশতলার চন্দননগরে আশরফের দু’টি কারখানায় এত দিন মূলত স্কুলের পোশাকই তৈরি হত। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাতে ভাটা পড়ে। তখনই সংবাদমাধ্যম থেকে আশরফ জানতে পারেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট)-র ঘাটতি রয়েছে। আশরফের কথায়, ‘‘চেষ্টা করলে পিপিই তৈরি করতে পারি কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করলাম। দেখলাম, আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে সব কিছু। যে বিশেষ কাপড়ের প্রয়োজন, তার কারখানার হদিসও পেয়ে যাই। তার পরে কয়েকটি পিপিই পোশাক বানিয়ে রাজ্য সরকারের তন্তুজ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আধিকারিকেরা সেই পিপিই পরীক্ষা করে দেখার পরে আমায় তা তৈরির বরাত দেন।’’
দেরি করেননি আশরফ। লকডাউনের কারণে এলাকার যে আরও ২০টি পোশাকের কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি অস্থায়ী ভাবে ভাড়া নেন। নিজের দু’টি আর ভাড়া নেওয়া ২০টি কারখানায় শুরু হয়ে যায় কাজ। লকডাউনের মধ্যে কী ভাবে চলছে এই কাজ? আশরফ জানাচ্ছেন, বাড়ি চলে গিয়েছেন অধিকাংশ শ্রমিকই। তবে ওই ২২টি কারখানায় এখন প্রায় দুশো জন শ্রমিক কাজ করছেন। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কাজের সময়ে মাস্ক আর বিশেষ পোশাক পরেই কাপড় কাটার কাজ করছেন তাঁরা। সুতো, চেন, বোতাম— পোশাক তৈরির অন্য উপকরণ মিলে যাচ্ছে ওই সমস্ত কারখানা থেকেই। পরে কাপড়-সহ সেই সব উপকরণ গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে আসা হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, ফলতা, জয়নগর ও উস্তি এলাকায় শ্রমিকদের বাড়িতে। সেখানে কাপড় সেলাই করে, বোতাম-চেন বসিয়ে পুরোদস্তুর পিপিই পোশাক বানিয়ে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। পরে সেই পোশাক ফের নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার পিপিই পোশাক তৈরি করে সরবরাহ করছেন আশরফ ও তাঁর শ্রমিকেরা। ‘‘লকডাউনে ওই সব শ্রমিকেরা তো কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাই এই পোশাকের বরাত পাওয়ায় তাঁদেরও অথৈ জলে পড়তে হল না।’’— বলছেন আশরফ।
আরও পড়ুন: প্রথম পুর প্রশাসকের বৈঠক জুড়ে করোনা
বন্দি শহরে শেয়ালেরও বন্ধু বন্ধ প্রকল্পের কর্মীরা
তন্তুজ সংস্থার এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘পিপিই-র এখন খুবই চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ওই পোশাক এক বারই মাত্র ব্যবহার করা যায়। কারখানা থেকে আসা ওই পোশাক জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার পরেই তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)